আবদুল গাফফার : চেহারা সুন্দর, বিদ্যা-বুদ্ধি তেমন নেই―এসব মানুষের তুলনা করা হয় মাকাল ফলের সঙ্গে। কিন্তু কেন? মাকাল ফল কি দেখতে সুন্দর?
আসলেই সুন্দর। এমনকি আপেলের চেয়েও সুন্দর। কাঁচা ফলের একরকম সৌন্দর্য, ডাসা ফলের আরেক রকম।
পাকলে গাঢ় লাল―দেখলেই জিভে পানি চলে আসে।
কিন্তু মানুষকে তাচ্ছিল্য করতে কেন মাকাল ফলের সঙ্গে তুলনা করা হয়?
কারণ মাকাল ফলের ভেতরকার চেহারা।
ভেতরে কালো কালো বীজ আছে। থকথকে জেলি মাখা বীজ। দেখতে বিড়ালের বিষ্ঠার মতো। অর্থাৎ মাকাল ফলের বাইরের চেহারা যতটা সুন্দর, এর ভেতরটা ততটাই বিশ্রী।
তেমনি এর স্বাদ! তেতো, মুখে দিলে গা গুলিয়ে আসবে। সুতরাং মাকাল ফল যে প্রবাদ বাক্যে জায়গা করে নিয়েছে, তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।
এই যে বিস্বাদ ফল, যেটা মানুষের কোনো কাজেই লাগে না, সেটা ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। একসময় এ দেশের মাঠে-পতিত জমিতে, গাঁয়ের ঝোপ-জঙ্গলে মাকাল ফল দেখা যেত। নব্বইয়ের দশক থেকেই কমে যেতে শুরু করে।
এখন গ্রামের মাঠে বিরল। বনে-জঙ্গলে হয়তো কিছু কিছু চোখে পড়ে। তার পরও হয়তো কোনো নদীর তীরে, ঘন ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর এই লেখার সঙ্গে সযুক্ত ছবির মতো কিছু মাকালগাছ দেখা যায়। সেটা দেখা আসলে উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে সৌভাগ্যের।
ছবির এই গাছটা পাওয়া গিয়েছিল ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। একটা প্রাকৃতিক বাওড়ের কিনারে। বুনো গুল্মলতায় ঠাসা সে জায়গায় ছিল মাঝারি আকারের একটা মেহগনি আর একটা শিশুগাছ। সেই গাছ দুটো বেয়ে, জড়িয়ে-কুড়িয়ে ছিল হাজার লতার এই উদ্ভিদ।
মাকাল ফল লতাজাতীয় উদ্ভিদ। লতা ভীষণ শক্ত, রং সাদাটে সবুজ, বেশ মোটা হয়। গোড়ার দিকের লতা দুই-চার ইঞ্চি পর্যন্ত মোটা হতে পারে। মাকালের পাতা চালকুমড়ার পাতার মতো। তিনটি ফলকে বিভক্ত, গোলাকার। পাতার বোঁটা থেকে শীর্ষ ফলক পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ছয় ইঞ্চি। আড়াআড়ি ব্যাস পাঁচ ইঞ্চি। পাতা খসখসে। বেশ পুরু। নরম। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। বোঁটার দৈর্ঘ্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। বোঁটা এক ইঞ্চি মোটা। মাকালের ফুল সাদা রঙের। লম্বা। মাইকের মতো। লাউফুলের সাথে মিল আছে। মঞ্জরি এক-পুষ্পক। ফুল গন্ধহীন। লাউয়ের মতোই ফুলের গোড়ায় ফল ধরে। মাকালের মূল সৌন্দর্যই এর ফলে। ফল গোলগাল। মসৃণ। অসম্ভব সুন্দর।
কাঁচা ফলের রং সবুজ। ফল আপেলের মতো মোটা হয়। পূর্ণঙ্গ ফলের ওজন ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম। ফল পাকার আগে হলুদ রং ধারণ করে। পাকলে টকটকে লাল হয় মাকাল ফল। খোসা পুরু। ফলের ভেতরে জেলির মতো থকথকে একধরনের পদার্থ থাকে। তার ভেতরে কালচে কদাকার বীজ।
বারোমাসি ফল। সারা বছর ফুল-ফল হয়। পানি পেলে সারা বছর চারা গজায়।
মাকালের বৈজ্ঞানিক নাম : Trichosanthes tricuspidata.
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।