জুমবাংলা ডেস্ক : সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ। কেউ পথচারী, কেউ ভ্যান বা ইজিবাইক চালক, আবার কেউ যাত্রী। শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বিনামূল্যে নিচ্ছেন দুপুরের খাবার। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের উত্তরপাশে প্রতি শনিবার দুপুরে এভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেন তারা। মাটির পাত্রে ভাতের সঙ্গে তাদের দেয়া হয় গরুর মাংস, ভর্তা, ডাল। সুপেয় পানির জন্য পাশেই স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ।
মানবতার সেবায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘আমরা আমাদের জন্য’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এতে জড়িত আছেন দেড় হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী ও যুবক। সমাজে ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে খুশি তারা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালিয়ে যাবার কথা জানান প্রতিষ্ঠাতা লিখন চৌধুরী।
লিখন চৌধুরীর পর এই মহতী কাজে নেতৃত্ব দিতে চান তার ছেলে আয়মান ইলিয়াস চৌধুরী। আনন্দ। প্রতি শনিবারই অন্যদের মতোই মাটির পাত্রে এখানে খাবার গ্রহণ করেন বাবা ও ছেলে। সারাজীবন অসহায় মানুষের পাশে থাকার কথাও জানান তারা।
জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের সূর্য্যনগর বাজারের সড়কের উত্তরপাশে বিনামূল্যে খাবার বিতরণের আয়োজন শুরু হয় বছরখানেক আগে। প্রতি শনিবার তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ মানুষ খেতে পারেন দুপুরের খাবার। মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর মেঝ ছেলের হাত ধরেই শুরু হয় এই মহতী উদ্যোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার দুপুরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মাটির পাত্রের খাবার গ্রহণ করছেন পথচারী, ইজিবাইক-ভ্যানচালক ও যাত্রীরা। পরে খাবার খেয়ে সেই মাটির পাত্র রেখে দিচ্ছেন যথাস্থানে। বিনামূল্যে এমন সুস্বাদু খাবার পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তারা। নিয়মিত এই কার্যক্রম চালিয়ে রাখার আহবান তাদের।
রিপন নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা গরিবরা সপ্তাহে একদিন ভালো খেতে পারি, এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। বর্তমান বাজারে মাংসের যে দাম, এটা আমাদের কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য প্রতি শনিবার এখানে ছুটে আসি।
ইজিবাইক চালক ইকরাম মাতুব্বর বলেন, প্রতি শনিবারই দুপুরের খাওয়াটা ভালো হয়। এখানে লিখন চৌধুরীর আয়োজনে আমাদের ভালো খাবার দেয়, সেটা খেয়ে সবাই তৃপ্তি পাই।
ভ্যানচালক জলিল ফকির বলেন, এই খাবার আমরা বিনামূল্যে দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে আসছি। আমাদের পক্ষে টাকা দিয়ে এই খাবার কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। অসহায় মানুষদের জন্য এই আয়োজন যেন বন্ধ হয়ে না যায়।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক আলী হোসেন বলেন, আমরা প্রতি শনিবার অসহায় মানুষকে খাবার খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকি। এইদিনটি সবার কাছেই এখন প্রিয়। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে আমরা তৃপ্তি পাই।
সদস্য শামীম আহম্মেদ বলেন, আমরা এখানকার স্বেচ্ছাসেবকরা সবাই নিজেদের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি। এজন্য এখানে কোনো ঝামেলা হয় না। সবাই খাবার খেয়ে খুশি হন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা লিখন চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা ছিল অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের জন্য নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অসহায় মানুষের নির্যাতনের গল্প শুনে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া প্রতি শনিবার দুপুরে সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষদের একবেলা বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়। যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলবে।
লিখন চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আয়মান ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুশি লাগছে। বাবার চালু করা এই কার্যক্রম আমিও ধরে রাখতে চাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।