আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই আলোচনায় আছে রুশ ধনকুবের ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী- ওয়াগনার গ্রুপ। রুশ সেনারা যা পারেনি, তাই করেছে দেখিয়েছে দেশটির ভাড়াটে সেনারা। এখন তারাই শুরু করেছে নাটকীয় এক লড়াই।
রাশিয়ার দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোগ ঘোষণা করেই ওয়াগনার গ্রপের নেতা প্রিগোজিন জানিয়েছেন, তার ছেলেরা মস্কোর দিকে যাচ্ছে। বাধা দিলেই বাধবে লড়াই। পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখলে নিয়েই এমন হুংকার দিচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপ।
ওয়াগনার বাহিনী কারা- মানুষের মনে এখন এই প্রশ্ন ওঠে আসছে বারবার। ভাড়াটে সেনা দলই বা কি রকম, কি তাদের কাজকর্ম। ব্রিটিশ সংবাদবাদ মাধ্যম বিবিসি জানাচ্ছে, প্রিগোজিনের হাতে তৈরি হয়নি ওয়াগনার গ্রুপ। বরং তিনি পুতিনের আর্শীবাদে পর এটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
ওয়াগনার গ্রুপ একটি রুশ আধা-সামরিক সংস্থা। একটি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি, ভাড়াটে সেনাদের একটি নেটওয়ার্ক। ওয়াগনার গ্রুপটি রাশিয়ায় আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করে। কারণ, রাশিয়ায় বেসরকারি সামরিক কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ।
এই বাহিনী রুশ স্বার্থ সমর্থনে কাজ করে ও এটি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরঞ্জাম নেয়। সে সঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থাপনা ব্যবহার করে। তাই ওয়াগনার গ্রুপকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একটি ডি ফ্যাক্টো ইউনিট বলা হয়।
ওয়াগনার গ্রুপ নিজস্ব কোন আদর্শ নেই। তবে ওয়াগনারের বিভিন্ন উপাদান নব্য-নাৎসিবাদ এবং উগ্র ডানপন্থী উগ্রবাদের সাথে যুক্ত। ইউক্রেনের দোনবাসের যুদ্ধের সময় এই গোষ্ঠীটি সুপরিচিত হয়ে ওঠে। সিরিয়া, লিবিয়া, মধ্য আফ্রিকা এবং মালিসহ বিভিন্ন দেশে সংঘাতে অংশ নিয়েছে।
চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা একজন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন সম্ভবত এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে এই বাহিনীর প্রধান হচ্ছে ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোজিন– যাকে পুতিনের রাঁধুনী বলা হয়। কারণ এক সময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন।
নিজের পুরনো রেডিও কল সাইনের নামানুসারে গ্রুপটির নামকরণ করেছিলেন দিমিত্রি উটকিন। চেচনিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার অভিজ্ঞ সমর কৌশলী তিনি, যিনি ওয়াগনারের প্রথম ফিল্ড কমান্ডার ছিলেন। ওয়াগনার গ্রুপের প্রথম অপারেশন ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময়।
ক্রিমিয়া দখলে রাশিয়ার ২০১৪ সালের যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকার সমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী, এবং সে সময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দিতো।
ওয়াগনারের ভাড়াটে সেনারা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হীরার খনি পাহারা দিতে কাজ করে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামি জঙ্গী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে।
ধারণা করা হয় যে, সুদানে সোনার খনি পাহারা দেবার কাজ করছে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা। আমেরিকার দাবি ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা। এই বাহিনীর জন্য সাধারণত কারাবন্দি সেনা সদস্যদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে। এখন তাদের সেনা সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো হবে। তবে অনিয়মিতসহ মোট সদস্যের সংখ্যা অর্ধ লাখ হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়ে থাকে।
ভাড়াটে যোদ্ধা রাশিয়ায় অবৈধ হলেও দেশটির নিবন্ধিত কোম্পানি হয়ে কাজ করে বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি ইউক্রেনের সৈন্যদের থেকে বাখমুতের দখল নিতে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল লড়াইয়ে এই যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, ওয়াগনার এখন ইউক্রেনে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ইউক্রেন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে। ওয়াগনার গ্রুপ ২০২২ সালে বিশাল পরিমাণে নিয়োগ দেওয়া শুরু করে।
মাত্র আট বছরে সদস্য আর সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠে ওয়াগনার গ্রুপ। রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্থ ও প্রশিক্ষণে পরিণত হয় দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে। নিয়মিত সেনা দলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সাফল্যের পালক। তবে, এর প্রধানসহ সদস্যদের বিরাট অংশই দাগী আসামি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।