জুমবাংলা ডেস্ক : চাকরির স্থায়ীত্বের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। চাকরি সম্পর্কে বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ বেশ নিরানন্দ কিন্তু চরম সত্য একটি কথা বলেছিলেন। তা হলো– ‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি’। যেহেতু কোনো চাকরিই বিশুদ্ধ নয়, তাই সেই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে অনেককেই নতুন চাকরি খুঁজতে হয় পুরোনোটা ফেলে। আর যারা বেকার বর্তমানে, তাদের তো চাকরির খোঁজে থাকতেই হয়।
তবে চাকরি জামা-কাপড় বদলানোর মতো কোনো আটপৌরে বিষয় নয়। তাই চাকরি খোঁজার সময় কিছু বিষয় মাথায় রেখে কৌশলীভাবে এগোনো উচিত। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
১. সিভি ঠিক আছে তো?
আমরা অনেকেই কিছু পুরোনো গৎবাঁধা কথার সিভিতে নিজেদের নাম-পরিচয় বদলে দিয়েই চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। ফলে ক্লিশে স্টাইলে তৈরি সেসব সিভি নিয়োগকর্তারা দেখেই বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন। কারণ সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত হলো সেই নথি, যা আপনার সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের একটি সংযোগ সেতু তৈরি করে। জীবনবৃত্তান্ত দেখেই যদি নিয়োগকর্তা আপনার প্রতি আগ্রহবোধ না করেন, তবে আর ইন্টারভিউতে ডাক পড়বে না। তাই সিভি এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে সেটি দেখেই নিয়োগকর্তা আপনাকে নির্ধারিত পদের জন্য বিবেচনা করা শুরু করতে পারেন।
এর জন্য নিজের শক্তিশালী দিকগুলোকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে আপনার সিভিতে। যেন একনজরেই চাকরিদাতা আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভাষা, ব্যাকরণ ও বানানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পুরোনো কর্মস্থলে আপনার যা যা অর্জন, সেগুলো সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে সিভির মাধ্যমে। এমন আকর্ষণীয় সিভি বানাতে হবে, যেন চাকরিদাতা চোখ বুলিয়েই নির্ধারিত পদে আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারেন। এখন সিভি লেখার ধরনও অনেক বদলে গেছে। এ ক্ষেত্রে সিভি তৈরি বা হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল স্টাইল দেখে নিলে ভালো হবে।
২. সবখানেই কি একই সিভি ও কভার লেটার দিচ্ছেন?
একেক চাকরিতে একেক ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী খোঁজা হয়ে থাকে। আমরা সাধারণত একই সিভি ও কভার লেটার সব জায়গায় পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু এটি একেবারেই উচিত নয়। তাই চাকরির আবেদন করার সময় ওই বিজ্ঞপ্তিতে কেমন কর্মী চাওয়া হচ্ছে বা কোন কোন যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটি মাথায় নিয়েই সিভি ও কভার লেটারের ভাষা ও ধরন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এতে নিয়োগকর্তাদের আগ্রহী করে তোলা সহজ হয়।
৩. নিজে কী চান, জানেন তো?
কোন ধরনের চাকরি আপনি করতে চান, সেটি চাকরি খোঁজার শুরুর দিকেই ঠিক করে নেওয়া ভালো। দেখা গেল, আপনি চান সৃজনশীল কোনো কাজ। কিন্তু আবেদন করে বসলেন কোনো কোম্পানির গৎবাঁধা কোনো কাজ পাওয়ার জন্য। হয়তো চাকরি হলে সাময়িকভাবে আপনার রুটি-রুজির সংস্থান হয়ে যাবে, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য অস্বস্তিও থেকে যাবে। দেখা যাবে, আবার মনের মতো চাকরি খুঁজতে বের হতে হবে আপনাকে। তাই যেকোনো চাকরিতে আবেদন পাঠানোর বদলে, নিজে কোনটি চান- সেটি নির্ধারণ করতে হবে আগে।
যদি পুরোনোটা ফেলে নতুন চাকরিতে ঢুকতে চান, তবে সেটি কেন করতে চান– সেই বিষয় নিজের কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে। এর পর কোন ধরনের চাকরি আপনার প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে হবে। কারণ সবার কাছে চাকরি শুধু বেতন তোলার জায়গা নয়। কারও কারও কাছে তার কর্মস্থলই তার প্যাশনের জায়গা। সেই সঙ্গে মানসিক প্রশান্তি পাওয়াটাও জরুরি কারও কারও কাছে। সুতরাং চাকরিটাকে কী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেন, সেটি ঠিক করা খুবই জরুরি।
৪. লিংকডইন-এ আছেন কি?
প্রফেশনাল সেক্টরের সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে লিংকডইন একমেবাদ্বিতীয়ম। এখন অনেক নিয়োগকর্তাই সিভি পাওয়ার পর প্রার্থী সম্পর্কে ধারণা পেতে তার লিংকডইনের প্রোফাইলে ঘুরে আসেন এক ঝলক। তাই চাকরি খোঁজার আগে নিজের লিংকডইন প্রোফাইল একদম ঝা চকচকে করে ফেলতে হবে। এমনভাবে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, যাতে আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা সম্পর্কে একজন নিয়োগকর্তা খুব ভালো ধারণা পায়। এতে করে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, তেমনি ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার আগেই নিয়োগকর্তা আপনার সম্পর্কে এক ধরনের ধারণা পেয়ে যাবেন। ফলে ইন্টারভিউয়ের পরিবেশও কিছুটা আপনার অনুকূলে চলে আসতে পারে।
৫. জানা-বোঝা জরুরি
যদি চাকরির ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়ে যান, তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে যেতে হবে। জানতে হবে, যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, তার দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পর্কেও। এতে করে ইন্টারভিউয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হবে। আবার ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার আগেও যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছেন, সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার চেষ্টা করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে হবে। এসব খোঁজ-খবর না থাকলে ইন্টারভিউয়ে নিজেকে যোগ্য ও উপযুক্ত প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
৬. বাড়াতে পারেন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা
ইন্টারনেটে এখন নানা ধরনের অনলাইন কোর্স আছে। ক্যারিয়ারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন কোর্স করলে আখেরে আপনারই লাভ। এসবে এখন সার্টিফিকেশনও পাওয়া যায়। সেসব সিভিতে উল্লেখও করা যায়। এতে নিয়োগকর্তার কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বৈ কমবে না। আবার স্থায়ী চাকরি খোঁজার ফাঁকে চাইলে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স কাজ বা স্বল্পমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে পারেন। এতে করে চাকরিজীবনে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা নবীনদের জীবনবৃত্তান্তের অভিজ্ঞতার অংশটুকু একেবারে শূন্য থাকবে না আর। বরং এসব কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনবৃত্তান্ত সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাওয়া যায়। আবার অস্থায়ী পদে চাকরি শুরু করেও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আসতেই পারে।
৭. প্রস্তুত থাকতে হবে সদা সর্বদা
চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে বা করার পর কিছু বিষয়ে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। যেমন ধরুন, চাকরির ইন্টারভিউ যেকোনো ফরম্যাটেই হতে পারে। সেটি ভিডিও ইন্টারভিউ হতে পারে, হতে পারে সরাসরি। খুব স্বল্প সময়েও ইন্টারভিউয়ের ডাক আসতে পারে। সব ক্ষেত্রেই সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার ইন্টারভিউ ভালোয় ভালোয় হলে চাকরিটা যদি নিশ্চিত হয়েই যায়, তবে জরুরি ভিত্তিতে অনেক সময় নিয়োগকর্তা আপনাকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে চাকরিতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে এবং অবশ্যই তা হতে হবে ইতিবাচক। তথ্যসূত্র: দ্য মুজে ডটকম, বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।