জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে প্রবাসীদের জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে রঙিন ছবি জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যথায় আবেদন ঝুলিয়ে রাখা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের এনআইডি সহজীকরণের লক্ষ্যে ছয়টি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত৷ প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে ভবিষ্যতে এমন আরও ৪০টি দেশে এই সেবা নিয়ে যেতে চায় সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে যেসব দেশে কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেসব দেশ থেকে ১০ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। অনেকের আবেদন তদন্ত শেষে নিষ্পত্তিও করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদন যথাযথ না হওয়ায় অনেকের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়নি। এক্ষেত্রে বৈধ পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন ও রঙিন ফটো জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক প্রবাসী তা পূরণ করতে পারছে না।
জানা গেছে, সম্প্রতি দূতাবাসে কর্মরত এনআইডি কর্মকর্তাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসির সিস্টেম এনালিস্ট মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ছয়টি দেশ থেকে প্রবাসীদের ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলমান আছে। ওই দেশের দূতাবাস/কনস্যুলার অফিসগুলো থেকে যেসব ভোটারের বায়োমেট্রিক নেওয়া হয়েছে তার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত সম্পন্ন করে সিস্টেমে তদন্ত প্রতিবেদন আপলোড করার জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূতাবাস/কনস্যুলার অফিসে কোন কোন আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক নেওয়া হয়েছে এবং কোন কোন আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক নেওয়া হয়নি তা উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিস থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ছবি, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সিএমএস এ এটাস করা হয়েছে কি না তাও দেখার সুযোগ রয়েছে। এ তিনটি ডকুমেন্ট তদন্তের ক্ষেত্রে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার জন্য সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য যে, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য ছবি, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট এই তিনটি ডকুমেন্ট বায়োমেট্রিক গ্রহণের সময় জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা দূতাবাস/কনস্যুলার অফিস থেকে কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিএমএস) আপলোড করা বাধ্যতামূলক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সংযুক্ত করা হলেও কালার ছবি দূতাবাস/কনস্যুলার অফিস থেকে সিএমএস এ সংযুক্ত করা হচ্ছে না। এদিকে বায়োমেট্রিক গ্রহণ করার পর সিস্টেমে বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে কি না এই স্টেটাস আপডেট দিতে দেরি হচ্ছে। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস/কনস্যুলার অফিসের জন্য এনআইডি হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনিক্যাল কর্মকর্তাকে নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো ডকুমেন্ট বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন বাতিল না করতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে আবেদনটি পেন্ডিং রেখে তথ্য চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো তথ্য বাদ পড়লে তা পরবর্তীতে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের।
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রবাসীদের অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। আবেদনে ভালো সাড়া পাচ্ছে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা। তবে সকল কাগজপত্র না থাকায় অনেকেই আবেদন করছেন না বলেও পর্যবেক্ষণ তাদের।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, পাসপোর্ট ছাড়া কারো আবেদনই আমরা আমলে নিচ্ছি না। এক্ষেত্রে যারা অবৈধভাবে প্রবাসজীবন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা কিছু করতে পারছি না। কেননা, নীতিমালা অনুযায়ী, অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বা বৈধ পাসপোর্ট যাদের নেই তাদের আবেদন আমলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, অনেকেই আবেদন করলেও তদন্তে গিয়ে সতত্য মিলছে না। ফলে তাদের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দেশে এসেই আবেদন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।