রাজধানীর উত্তরায়
দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিমান বাহিনীর যে ফাইটার জেট বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি ‘এফ-সেভেন বিজিআই’ মডেলের যুদ্ধবিমান। এই উড়োজাহাজটি তৈরি করেছে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। এটিকে ‘চেংদু জে-সেভেন’ মডেলের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি মূলত সোভিয়েত আমলের মিগ-টোয়েন্টি ওয়ানের উন্নত চীনা সংস্করণ।বাংলদেশ বিমান বাহিনীর কাছে মোট ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই এফ-৭ বিজিআই। এছাড়া এফটি-৭ এমবি ও এফ-৭ বিজি ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৬টি ‘এফ-সেভেন বিজিআই’ যুদ্ধবিমান হাতে পায়।
যুদ্ধবিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন ও উৎপাদানকারী কোম্পানি চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই মূলত বহুমুখী অভিযান ও উন্নত প্রশিক্ষণে সক্ষম একটি হালকা যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে এই বিমান তৈরি করে চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন।
২০১১ সালে চীনের কাছ থেকে ১৬টি জেট ফাইটার কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে সেগুলো বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়। ওই বছরই চেংদু এয়ারক্র্যাফ্ট কর্পোরেশন এই মডেলের উড়োজাহাজের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী ‘এফ-৭ বিজিআই’ সংস্করণটি ‘স্বল্প খরচে’ বানানো হয়।
সোভিয়েত আমলের মিগ-২১ এর মডেলের আদলে এই বিমানটি তৈরি করে চীন। পাইলটদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের সময় সীমিত ভূমিকা রাখতে পারে এই বিমান। ২০১৩ সালে চীন ১৬টি এফ-৭ বিমান বাংলাদেশে রপ্তানি করে। সেটিই ছিল এই বিমানের শেষ চালান। এরপর থেকে চীন এফ-৭ বিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
উড়োজাহাজটির সর্বোচ্চ গতিবেগ মাক ২.২, অর্থাৎ ঘণ্টায় দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার। আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, লেজার গাইডেড বোমা ও জিপিএস গাইডেড বোমা, বাড়তি জ্বালানি ট্যাংকসহ দেড় হাজার কেজি ওজন বইতে পারে এসব যুদ্ধবিমান। এর ককপিটে একজন বৈমানিক বসতে পারেন।
এক আফটারবার্নিং ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত এই বিমান ৮২ কিলোনিউটন শক্তি উৎপন্ন করে। এটি সাড়ে ১৭ হাজার মিটার পর্যন্ত উঁচুতে চলাচল করতে পারে। বিমানের ককপিটে তিনটি মাল্টি-ফাংশনাল এইচইউডি ডিসপ্লে ও এইচওটিএএস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে।
ফলে পাইলটকে প্রতি মুহূর্তে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে বিমানটি পরিচালনা করতে হয়। এফ-৭ বিজিআই বিমানে কেএলজে-৬এফ ফায়ার কন্ট্রোল রাডার রয়েছে। যা ৮৬ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে। একই সময়ে একসঙ্গে ছয় লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও একযোগে দুটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে বিমানটি।
এফ-৭ বিজিআই বিমানে সাতটি হার্ড-পয়েন্ট রয়েছে। এর ফলে বিমানটি পিএল-৫, পিএল-৭, পিএল-৯ এমনকি পিএল-১২ এর মতো স্বল্প পাল্লার এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। পাশাপাশি বোমা, আনগাইডেড রকেট এবং সর্বোচ্চ ৩ হাজার পাউন্ড ওজনের চীনা লেজার গাইডেড বোমা নিক্ষেপেও সক্ষম এই বিমান।
চীনের তৈরি এই বিমান জাহাজ-বিধ্বংসী সি-৭০৪ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে এফ-৭ বিজিআই বিমান। আধুনিক বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী যুদ্ধবিমানের মতো এই যুদ্ধবিমানটির দৃষ্টিসীমার বাইরে (বিভিআর) ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা নেই।
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয়। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরে মহড়ার সময় বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।
এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-৭ এমবি। ওই দুই ঘটনায় দুজন বৈমানিক নিহত হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।