বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ফেসবুক। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে সব বয়সীরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে পোস্ট লিখে, ছবি ও ভিডিও দেখে সময় ব্যয় করছে। অনেকে এটিকে পেশা হিসেবেও নিচ্ছেন। যেহেতু এসব কনটেন্ট থেকে আয়ের সুযোগ রয়েছে।
বেশিরভাগ কনটেন্ট নির্মাতার চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে তার দর্শকের সংখ্যা এবং কন্টেন্টের ভিউ বাড়ানো। কিন্তু নিজের খেয়াল খুশিমতো কনটেন্ট প্রকাশের মাধ্যমে আপনি এই ক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন না। এ জন্য ফেসবুকের নির্ধারিত কিছু নিয়ম-কানুনের মধ্যে দিয়ে আপনাকে কনটেন্ট আপলোড করতে হবে। বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে। রিচ বাড়ানোর জন্য ফেসবুকের কিছু নিয়ম-কানুন জেনে রাখা জরুরি-
কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস
ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে কী অনুমোদিত এবং কী অনুমোদিত নয়, সেগুলো এখানে বলা হয়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কী ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করা যাবে না। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস লঙ্ঘন করলে আপনার কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানো হতে পারে এবং এর ফলে আপনার অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
একটি কনটেন্ট নানাভাবে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে যেতে পারে, যেমন-
* কন্টেন্টে হিংসাত্মক এবং অপরাধমূলক আচরণ প্রকাশ।
* বিপজ্জনক ব্যক্তি বা সংগঠনকে প্রচার।
* অপরাধমূলক কনটেন্ট প্রচার।
* বিধিনিষেধ যুক্ত পণ্য এবং পরিষেবার প্রচার।
* প্রতারণামূলক কনটেন্ট।
* আত্মহত্যা এবং নিজেকে আঘাত করে কিছু করা কনটেন্ট।
* অশালীন এবং আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচার।
* ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ ভাষার ব্যবহার।
* সহিংসতা এবং যৌনতাপূর্ণ বিষয়বস্তু প্রচার।
* গুজব ছড়ানো।
কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন গাইডলাইনস
এই মানদণ্ডের অধীনে ফেসবুক সমস্যাযুক্ত বা নিম্নমানের বিভিন্ন কন্টেন্টগুলোর প্রচার বা রিচ সীমিত করে দেয়। এটি আবার ৩টি মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেমন-
ব্যবহাকারীদের সরাসরি প্রতিক্রিয়া
ব্যবহাকারীরা যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট কনটেন্ট দেখতে চায় না তখন এটি কার্যকর হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাড ফার্ম, ক্লিকবেট এবং এনগেইজমেন্ট বেইটের মতো বিষয়গুলো।
উচ্চমানের এবং সঠিক কন্টেন্ট
প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট উচ্চ-মানের এবং সঠিক না হলে ফেসবুক সেটির প্রচার কমিয়ে দেয়। যেসব কনটেন্ট এই নীতির অধীনে পড়ে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অমৌলিক সংবাদ, ভুল তথ্য, গুজব এবং এমন সব কনটেন্ট যেগুলোর প্রচার কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
নিরাপদ কমিউনিটি রক্ষা
* ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বেশ কঠোর। এই নীতির অধীনে যেসব কনটেন্ট পড়ে তার মধ্যে রয়েছে, যৌনতা বা সহিংস কোনো কন্টেন্টের লিঙ্ক এবং যেসব কনটেন্ট কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস লঙ্ঘনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
* ‘কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন গাইডলাইন’ বারবার লঙ্ঘন করার ফলে কন্টেন্টের প্রচার বা রিচ কমে যায়।
* কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে আপনার আরেকটি লক্ষ্য থাকতে পারে অর্থ উপার্জন। সে ক্ষেত্রে আয় করার জন্যে আপনার ওপর আরও কিছু নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
* সফলভাবে অর্থ উপার্জন করার জন্য, আপনার অ্যাকাউন্টটিকে ফেসবুকের পার্টনার মনিটাইজেশন পলিসি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি কনটেন্টগুলোকে ফেসবুকের কন্টেন্ট মনিটাইজেশন পলিসিও মেনে চলতে হবে।
নিয়ম ভঙ্গ করেছেন কি না যেভাবে বুঝবেন
* আপনি যদি ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে যায় এমন কন্টেন্ট পোস্ট করেন, তাহলে সেটি তারা সরিয়ে দেবে। সঙ্গে আপনাকে সেটি সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্রাইক প্রয়োগ হতে পারে। স্ট্রাইক প্রয়োগ হবে কি না তা নির্ভর করে কন্টেন্টের তীব্রতা, কোন প্রসঙ্গে এটি শেয়ার করা হয়েছিল এবং কখন পোস্ট করা হয়েছিল তার ওপর।
* আপনি পেজ কোয়ালিটি টুলে গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টের বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন। যেখান থেকে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে কোনো কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন হয়েছে কি না বুঝতে পারবেন।
কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে যে ৩টি বিষয় এড়িয়ে চলবেন
৩টি বিষয়ের কারণে কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রায়শই ঝামেলায় পড়তে দেখা যায়। অনেকে মনে করেন এগুলোর মাধ্যমে বেশি দর্শক এবং ভিউ পাওয়া সম্ভব। তবে দীর্ঘমেয়াদে এগুলো আপনার ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ ক্যারিয়ারের ক্ষতি করবে।
এনগেজমেন্ট বেইট
অনেকসময়ই দেখা যায়, পোস্টে কেউ কেউ লাইক, শেয়ার, কমেন্ট বা ইন্টারঅ্যাক্ট করার জন্য অনুরোধ করেন। যেমন ধরুন, ‘১০ জন বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করার মাধ্যমে নতুন মোবাইল ফোন জিতে নিন’, ‘আপনার সঙ্গেও এমনটি ঘটে থাকলে পোস্টটি লাইক করুন’; অর্থাৎ লাইক, শেয়ার, কমেন্ট চেয়ে নেওয়ার প্রবণতাই হচ্ছে এনগেজমেন্ট বেইট। যা করলে আসলে ফেসবুক পোস্টটির রিচ কমিয়ে দেয়।
কন্টেন্টের মৌলিকতার অভাব
ফেসবুক অরিজিনাল বা মৌলিক কন্টেন্টের ওপর বেশি জোর দেয়। যেটি আপনি নিজে কণ্ঠ দিয়ে, সম্পূর্ণ নিজ থেকে মৌলিকভাবে তৈরি করেছেন তার মূল্য ফেসবুকের কাছে বেশি। অন্যদের কনটেন্ট হালকা এডিট করে, কাটছাঁট করে কিংবা আগে থেকে বিদ্যমান কোনো কনটেন্ট নকল করে পোস্ট করলে ফেসবুক সেগুলোকে মৌলিকতা লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করে।
ওয়াচবেইট
আমরা এই ধরনের কন্টেন্টের সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত। থাম্বনেইল, শিরোনাম বা টেক্সটগুলোয় চাঞ্চল্যকর বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ভিউ নেওয়া হয় এগুলোর মাধ্যমে। ওয়াচবেইট কনটেন্টে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য আটকে রাখা হয়। যার মাধ্যমে মনে হতে পারে কনটেন্টে চাঞ্চল্যকর কিছু আছে। ফলে দর্শক পুরো ভিডিওটি দেখার জন্য বসে থাকে। এতে করে দর্শককে আসলে বিভ্রান্ত করা হয়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ‘দেখুন এ কী হলো’ ধরনের কনটেন্টগুলো এই শ্রেণির অধীনে পড়ে। যেগুলোর ভেতরে আসলে তেমন কিছুই থাকে না। অপ্রয়োজনীয় অতিরঞ্জন ব্যবহার করে প্রায়শই বিভ্রান্তিকর প্রত্যাশা তৈরি করে এগুলো। যা শেষ পর্যন্ত দর্শককে প্রতারিত করে। তাই এসব কনটেন্ট প্রচার করলে ফেসবুক ভিডিও কিংবা পেজ ডিমোট করতে পারে।
সমস্যায় পড়লে যা করবেন
কাজ করার সময় নানারকম সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এটি কাজেরই একটি অংশ। এক্ষেত্রে মনিটাইজেশনের যোগ্যতা, বুলিং, ভেরিফিকেশনের মতো বিভিন্ন সাধারণ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ফেসবুকের রয়েছে ক্রিয়েটর সাপোর্ট।
ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট নির্মাণের পূর্বে এর নিয়ম-কানুনগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়ম-কানুন সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকলে আপনি দীর্ঘমেয়াদিভাবে এই ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারবেন না।
সূত্র: মেটা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।