সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের গৃহবধু কাঞ্চন মালা একটি দাঁতে গর্ত ও দুইটি দাঁতে সামান্য ক্ষয় সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে মানিকগঞ্জ সদরের পৌর সুপার মার্কেটে ডা: সুবীর কুমার সাহার কাছে আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে। ডা: সুবীর কুমার সাহা যথারীতি কাঞ্চন মালাকে দেখে দাঁতের চিকিৎসা করেন এবং ব্যবস্থাপত্র দেন। এরপর কাঞ্চন মালা বাড়িতে ফিরে গেলে ধীরে ধীরে তার দাঁতের ব্যথা বাড়তে থাকে। এ কারণে সে পুনরায় ডা: সুবীরের কাছে গেলে ডা: সুবীর গৃহবধু কাঞ্চন মালার আরো ৭টি দাঁতের উপর কাটাছেড়া করেন। এতে করে ওই গৃহবধু আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে সে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন। ওই চিকিৎসক জানান ভূল চিকিসার কারণে গৃহবধু কাঞ্চন মালার দাঁতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন তার দাঁতের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা লাগবে।
এছাড়া, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার চামারখাই গ্রামের মো: বাচ্চু মিয়া দাঁতের ব্যথা নিয়ে কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঔষধপত্র দিয়ে দাঁতের এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। এরপর দাঁতের এক্স-রে করাতে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পৌর সুপার মার্কেটে ডা: সুবীর কুমার সাহার কাছে যান। ডা: সুবীর বাচ্চু মিয়ার দাঁত দেখে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বলেন, এক্স-রে করার প্রয়োজন নেই। তিনটি দাঁত তুলে ফেললেই ব্যথা কমে যাবে। মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বাচ্চু মিয়ার দাঁত তুলে ফেলার পর সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাচ্চু মিয়া কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে বলেন। পরে বাচ্চু মিয়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ২২ দিন ভর্তি থেকে দাঁতের চিকিৎসা করান। এতে তার প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়।
সুবীর কুমার সাহার কাছে প্রতারিত হয়ে ও ভূল চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলা সিভিল সার্জন, জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মানিকগঞ্জ সদর থানা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ডা: সুবীর কুমার সাহার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ করার পরেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিলেও থেমে নেই ডা:সিুবীর কুমার সাহার অপচিকিৎসা। ডাক্তার না হয়েও নামের আগ ডাক্তার লিখে ভিজিটিং কার্ড ও সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসার নামে প্রতারণা।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জ পৌর সুপার মাকের্টে সুবীর কুমার সাহার চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, চেম্বারের ভেতরে- বাইরে চটকদার সাইনবোর্ড, ব্যানার ঝুলিয়ে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিচ্ছেন সুবীর কুমার সাহা। নিজে ডাক্তার না হলেও তার একজন নারী ও একজন যুবক সহকারী রয়েছে। দুই সহকারী তাকে চিকিৎসার কাজে সহায়তা করেন। এছাড়া, চেম্বারের বাইরে ডেন্টাল সার্জন ডা: লিলিয়া সাহার নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছেন। অথচ জানা গেছে, ডা: লিলিয়া সাহা ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
সুবীর কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ডেন্টাল চিকিৎসক না হলেও ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছি। কাঞ্চন মালা আমাকে ৬ হাজার টাকা দিয়েছে, তার দুইটি দাঁত ক্যাপ পড়িয়ে দিয়েছি ও একটি দাঁত ফিলিং করে দিয়েছি। সে আরো কয়েকটি দাঁতের চিকিৎসা ফ্রি করানোর চেষ্টা করেছিল। আমি করিনি বলে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আর বাচ্চু মিয়ার বিষয়টা কয়েকজন নেতার সাথে বসে মিটমাট করার কথা হয়েছে। ডা: লিলিয়া সাহা মারা গেছেন এটা ঠিক আছে, তবে আগামী সপ্তাহ থেকে অন্য কোন ডাক্তার বসানোর ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খুব শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ এ্যাপোলো হাসপাতাল: প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।