ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহরটায় সবাই ঘুমিয়ে ছিল। ভোরের ঠিক আগে শীতের ঠিক ওই সময় এক নবজাতক পড়ে ছিল রেলওয়ে কর্মীদের কলোনির বাথরুমের বাইরে। শিশুটির বয়স মাত্র কয়েক ঘণ্টা। গায়ে কোনো পোশাক নেই।

ধাওয়া খেয়ে বেড়ানো ভবঘুরে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো ঠাণ্ডা মাটিতে ফেলে রাখা শিশুটিকে ঘিরে রেখেছিল। সেই কুকুরগুলো শুধু নীরবে প্রহরা দিচ্ছিল নবজাতকে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাতভর কুকুরগুলো কাউকেই শিশুটির কাছে যেতে দেয়নি। কেবল ভোরের আলো ফুটলেই কুকুরগুলো সরে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু দেবনাথ জানান, আশেপাশে শিয়ালের উৎপাত অত্যন্ত বেশি। শুধুমাত্র কুকুর থাকাতেই এলাকায় ঢুকতে পারে না শেয়ালের দল। এদিনও তারাই শিশুটির প্রাণরক্ষা করে।
আরেক বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল বলেন, ‘ঘুম ভেঙে আমরা যা দেখেছিলাম, তাতে এখনো শরীর শিউরে ওঠে।’ তিনি সবার আগে কুকুরসহ শিশুটিকে দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘কুকুরগুলো রাগী ছিল না। তারা সতর্ক, যেন বুঝতে পারছিল এই শিশুটা বাঁচার জন্য লড়ছে।’
এলাকার মানুষের ধারণা, অন্ধকার রাতের সুযোগে কেউ শিশুটিকে সেখানে ফেলে চলে যায়। তারা জানান, শিশুটির চারপাশ ঘিরে কয়েকটি কুকুর সারারাত ধরে পাহারা দিয়ে রেখেছিল।
আরেক বাসিন্দা সুভাষ পাল বলেন, ‘ভেবেছিলাম আশপাশের কোনো বাড়িতে অসুস্থ বাচ্চা আছে। কখনো কল্পনা করিনি বাইরে মাটিতে এক নবজাতক পড়ে আছে, আর তার চারপাশে কুকুরেরা পাহারা দিচ্ছে। তারা ঠিক প্রহরীর মতো আচরণ করছিল।’
অবশেষে শুক্লা মণ্ডল ধীরে ধীরে কুকুরগুলোকে সরিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেন এবং প্রতিবেশীদের ডাকেন। প্রথমে শিশুটিকে উদ্ধারের পর নবদ্বীপ মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চিকিৎসকেরা পরে জানান, শিশুটির শরীরে কোনো আঘাত নেই। মাথার রক্ত জন্মদাগ থেকেই হওয়া সম্ভব এবং সবকিছু দেখে মনে হয়েছে, জন্মের পরে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। নবজাতকটি বর্তমানে সুস্থ আছে।
শিশুটি সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে চাইল্ডলাইন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তবে কে বা কারা শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। নবদ্বীপ থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র : দ্য ওয়াল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



