জুমবাংলা ডেস্ক : যশোরে পাট পচাতে রিবন রেটিংয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না চাষিরা। চাষিদের বক্তব্য, এই পদ্ধতিতে পাট পচাতে খরচ বেশি। পাশাপাশি পাটের রঙ ঠিক না থাকায় আশানুরূপ দামও পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় জেলার ২৪ হাজার ৮ শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে লাগানো পাট পচানো নিয়ে প্রায় ৯০ হাজার কৃষক মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দীর্ঘদিন তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পানির অভাবে যেসব এলাকায় উৎপাদিত পাট পচানো সমস্যা হয় সেখানকার জন্য রিবন রেটিং বা পাটের ছালকরণ ও পচন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই পদ্ধতিতে পাটের ছাল পচানোর জন্য পানি, জায়গা ও সময় কম লাগে। আঁশে কাটিংস হয় না। আঁশের মান ভালো হয়। এ গ্রেডের আঁশ পাওয়া যায়। মূল্য বেশি পাওয়া যায়। পরিবহন খরচ কম লাগে। স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা এটি। পদ্ধতিটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। পাট খড়ি শক্ত থাকে বলে জ্বালানি ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহারে টেকসই এবং সুবিধাজনক বলে মনে করে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।
যশোরে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়ার পরও পাটের আঁশ ছাড়ানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি তেমন কোনো কাজে আসছে না। এ কারণে ১ হাজার ৫৩০টি আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র কৃষি বিভাগের বিভিন্ন কার্যালয়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে। খরচ বেশি হওয়ার কারণে চাষি এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী না বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, ২০১০ সালে যশোরের পাটচাষিদের জন্য ৮০০ এবং ২০১১ সালে ৭৩০টি পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র (রিবনার মেশিন) সরবরাহ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ওইসময় জেলার ৭৮ হাজার কৃষককে ২০০ টাকা করে দুই বছরে মোট ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। তখন প্রশিক্ষণও দেয়া হয় কৃষকদের। তারপরও রিবন রেটিং পদ্ধতি আলোর মুখ দেখেনি। কারণ হিসেবে চাষিরা জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পচাতে অতিরিক্ত ১২-১৫ জন শ্রমিক লাগে। বাড়তি খরচ হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তুকির টাকা দেয়ার পর দুই বছর অনেকে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচান। কিন্তু বর্তমানে কৃষকের সামনে এ পদ্ধতির কথা বলাই যাচ্ছে না।
চাষিরা বলছেন, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠি কাজে লাগানো যায় না। হাফিজুর রহমান নামে একজন পাট চাষি বলেন, রিবন রেটিং মেশিন দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ১৮ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৩২ জন প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়, আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় মাত্র ১১-১২ হাজার টাকা।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চাষি রিবন রেটিংয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা সনাতনী পদ্ধতিতে পাট পচাতে আগ্রহী। গত বছর পাটের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর পাট চাষ বেশি হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখনো সময় রয়েছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এভাবে যদি আগামী ১০-১৫ দিন হয় তাহলে পাট পচাতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আর বৃষ্টি না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষি।
উল্লেখ্য, এ বছর যশোর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৩ শ’ হেক্টর। আর চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।