জুমবাংলা ডেস্ক : ধু ধু বালু চরে সবুজের সমোরহ। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠজুড়ে কৃষকের নয়ন জুড়ানো হাসি। বুক বাধা স্বপ্ন নিয়ে মাঠে তরমুজের বীজ বুনেছে চাষি। প্রত্যাশা ছিল বুনিত বীজের ফলন ভালো হবে। এতে করে দুঃখ বিমোচন হবে। কিন্তু সেই আশার আলো ফিকে হয়ে গিয়েছে ফসলের মাঠে নির্ণয় না করা অজানা রোগে। বাসা বেধেছে জানা-অজানা ক্ষতিকর পোকাও। রোগ ধরে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ অথচ কোনো সামাধান মেলেনি। কৃষি সংশ্লিষ্ট বীজ্ঞ কর্মকর্তরা একেরপর এক এলো আর গেলো কিন্তু সময় মতো সমাধান দিতে পারলো না প্রান্তিক চাষিদের। খেই হারিয়ে তবুও ধার-দেনা আর ঋণ নিয়ে উচ্চ ফলনশীল ফসল তরমুজ আবাদ করছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চাষিরা। মৌসুমের মাঝামাঝিতে কোনো কোনো চাষির স্বপ্ন মারা গিয়েও যেন পুঁজি তোলার হাতছানি দিচ্ছে। আর অনেকে হয়েছেন সর্বশান্ত। দুশ্চিন্তায় মাথায় তুলতে হবে তরমুজের মৌসুম ফুরালে। কেননা তখনই তাগাদা বাড়বে ঋণের টাকার। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তার কারণ খুঁজেছে কৃষি বিভাগ। আক্রান্ত গাছ ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে গবেষণা কেন্দ্রে। সেই নমুনা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে তিনটি রোগ চিহ্নিত করেছে বৈজ্ঞানিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে তরমুজ আবাদের হার বেশি। সবার আগে তরমুজ ফলনের আশায় প্রতি বছর এই এলাকার কৃষি জমি কম বেশি অনাবাদি রাখেন চাষিরা। তবে এ পন্থা হতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কৃষকদের বিমুখ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। কৃষি কর্মকর্তাদের সকল বার্তা মানেন না তারা। যার অন্যতম বার্তা হলো একই জমিতে প্রতি বছর উচ্চ ফলনশীল ফসল তরমুজ আবাদ না করা। এরপরে রয়েছে কীটনাশক আর সার ব্যবহারের পরিমাণ। কৃষি দফতর থেকে মাঠপর্যায়ে গিয়ে কর্মকর্তারা কীটনাশক আর বালাইনাশক ব্যবহারে পরিমিত মাত্রা বেধে দিলেও সেটিও পাত্তা দেন না অনেকে। যেকোনো রোগ কিংবা গাছের মান ঠিক রাখতে কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করেন তরমুজের জৈষ্ঠ্য চাষিদের পরামর্শে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, তরমুজের গাছ মারা যাওয়া শুরু হয়েছে ২০২১ সাল থেকে। ওই সময় হালকা মারা গেলেও এর ভয়াবহতা বেড়েছে ২০২২-২৩-২৪ সালে। এ দফতরের জরিপ মতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮২৬২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। যেখানে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার তরমুজ। অথচ চলতি অর্থ বছরে আবাদ হয়েছে ৫৬০০ হেক্টর। ধারণা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর বাজার দর ভালো থাকলে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে এ উপজেলায়।
আক্রান্ত গাছ ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হলে সেখানকার বৈজ্ঞানিকরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ‘গামি স্টেম ব্লাইট, ঢলে পড়া ও বাড নেক্রসিস ভাইরাস’ নামের রোগ চিহ্নিত করেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তরমুজ চাষিরা বলছেন, ‘বীজ বপনের পরে যখন গাছ দেড় থেকে দুই হাত প্রসারিত হতো এরপরে গাছের মাথা হলুদ হয়ে যেতো। এরপরে ফল আসলে গাছ মারা যায়। রোগের নানাবিধ উপসর্গ রয়েছে কিন্তু সেগুলোর চিকিৎসায় কার্যকর সমাধান পাননি তারা। তবে একেক সময় একেকজন কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করতে বললেও সেই চিকিৎসার সুফল পাননি। এক্ষেত্রে স্থানীয় জৈষ্ঠ্য চাষিদের পরামর্শ নেয়া হতো।’
আক্ষেপ নিয়ে তারা আরো বলেন, ‘প্রথম দিকের অনেক গাছ মারা গিয়েছে। এখন যে গাছ রয়েছে আবহাওয়া অনুকূলে আর বাজার দর ভালো থাকলে ক্ষতি পোষবে। আর যারা ছোট চাষি রয়েছে তারা অনেকেই প্রজেক্ট ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছে। তবে তরমুজ আবাদের অন্যতম ভরসা বায়না, ধার-দেনা ও ঋণের টাকা। এ বছর অধিকাংশ চাষি দুশ্চিন্তায় দিনপাড় করছেন ওইসব ঋণ পরিশোধের।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর শুরুর দিকে তরমুজ গাছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করলেও অধিকতর গবেষণার জন্য বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে আক্রান্ত জমির কিছু নমুনা বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে আমাদের তিন ধরনের সমস্যার কথা জানানো হয়। বৈজ্ঞানিকদের দেয়া পরামর্শ কৃষকদের মাঝে প্রচার করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘একই জমিতে বছরের পর বছর তরমুজ আবাদ করার কারণে রোগ এবং পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। ফলে গাছ সহজেই আক্রান্ত হয়েছে। আমরা কৃষকের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি তারা যেন এক জমিতে বছরের পর বছর একই ফসল চাষ না করে। সেইসাথে ভিন্ন ধরনের ফসল চাষের জন্যও উৎসাহ দিচ্ছি। এক্ষেত্রে কৃষকরাও আশ্বস্ত করেছে তারা শষ্য পর্যায়ের ফসল চাষ করবেন।’
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র কুন্ডু বলেন, ‘যে কৃষক হাইব্রিড বীজ দিয়ে তরমুজ আবাদ করবে তার বীজ রাখা যাবে না। একই জমিতে বারবার তরমুজ আবাদ করা কারণে মাটিসহ গাছ মারা যাচ্ছে। এ জন্য যেই জমিতে রোগ দেখা দেয় সে জমিতে পরবর্তী দুই বছর দানাদার জাতীয় ফসল চাষ করতে হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।