ধর্ম ডেস্ক : রোজায় লোক দেখানোর বিষয়টি খুব কম। কেননা অন্যান্য ইবাদতের আকৃতিগত রূপ আছে। যেমন : যখন নামাজ আদায় করা হয়, জাকাত প্রদান করা হয়, হজ পালন করা হয় তখন অন্যান্য মানুষ তা দেখে বুঝতে পারে যে, অমুক ইবাদত পালন করা হচ্ছে। তাই এসব ইবাদতে লোক দেখানোর অসুখ ইবাদতকারীর মনে প্রবেশ করতে পারে। পক্ষান্তরে রোজা এমন এক ইবাদত যেটার উল্লিখিত ইবাদতসমূহের মতো বিশেষ কোনো আকৃতিগত রূপ নেই। তাই কেউ রোজাদারকে দেখে বুঝতে পারে না, সে রোজা রেখেছে কি না। সে রোজা রেখেছে কি না, তা জানেন কেবল আল্লাহতায়ালা। তাই রোজায় লোক দেখানোর বিষয়টি সাধারণত সামনে আসে না। তবে রোজার ক্ষেত্রেও লোক দেখানোর বিষয়টি সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আল্লাহতায়ালা রোজার কাঠামো ও ক্রিয়াকলাপকে অন্যান্য ইবাদত থেকে আলাদা করে এমনভাবে সাজিয়েছেন, যাতে রোজায় একমাত্র তার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য না থাকে। আর মানুষ রোজা রাখেও সেই উদ্দেশে। তবুও বিভিন্ন কারণে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে যেতে পারে। সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হলে রোজা কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।
আল্লাহতায়ালা রোজায় যে অগণিত সওয়াব রেখেছেন তা পরিপূর্ণভাবে অর্জন করার জন্য শুধু না খেয়ে থাকলেই হবে না। বরং রোজার হক আদায় করতে হবে। রোজার আদব রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় রোজা হবে সওয়াবহীন। রোজার হক ও আদব রক্ষার জন্য করণীয় হলো, প্রথমত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা পালন করতে হবে। কেননা তা ছাড়া কোন ইবাদতই গ্রহণীয় হয় না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা আদিষ্ট হয়েছে আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে।’ -সুরা বাইয়িনা ৫
শুধু উদরকে খাবার থেকে এবং প্রবৃত্তিকে কামাচার থেকে বিরত রাখার নাম রোজা নয়। এগুলোর সঙ্গে জিহ্বা, কান ও চোখেরও রোজা রয়েছে। তাই জিহ্বাকে মন্দ কথা থেকে, কানকে অশ্লীল শ্রবণ থেকে এবং চোখকে অশালীন দৃশ্য থেকে বিরত রাখতে হবে। তবেই রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। রোজা রেখে জিহ্বাকে সংযত করতে না পারলে রোজা হবে সওয়াবহীন। জিহ্বা অধিকাংশ অনিষ্টের মূল। অধিকাংশ গোনাহের কাজ সংগঠিত হয় জিহ্বার মাধ্যমে। তাই রোজা রেখে মিথ্যা বলা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, ঝগড়া করা, গালি দেয়া ও অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমি এক দিন রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে জিনিসগুলো আপনি আমার জন্য ভয়ের বস্তু বলে মনে করেন, তার মধ্যে অধিক ভয়ঙ্কর কোন জিনিস? হজরত সুফিয়ান (রা.) বলেন, এটা শুনে রাসুল (সা.) নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এটা।’ -সুনানে তিরমিজি
যেসব কথা মুখে বলা না জায়েজ সেসব কথার প্রতি কর্ণপাত করারও একই হুকুম। যদি অশ্রাব্য কোন কথা কানে চলে আসে কিংবা কোন মজলিসে যদি কারো গীবত হতে থাকে তাহলে আবশ্যক হলো তা করতে নিষেধ করা, না শোনলে উক্ত স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়া। অন্যথায় ইচ্ছাকৃতভাবে অশ্রাব্য কথা ও গিবত শ্রবণ করার কারণেও রোজা সওয়াবহীন হয়ে যাবে। কেননা অশ্রাব্য কথা বলা ও গিবত করা যেমন অপরাধ ঠিক একই অপরাধ অশ্রাব্য কথা ও গিবত শোনা। পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘যখন আল্লাহতায়ালার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রƒপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মতো হয়ে যাবে।’ -সুরা নিসা ১৪০
আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গোনাহের মধ্যে চোখের একটি বিশাল অংশ রয়েছে। চোখকে বলা হয় মনের আয়না। যে কোনো কাজ করার আগে চোখ প্রথমে তা দেখে এবং পরে মনকে প্রলুব্ধ করে। মনকে প্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখতে চোখের সংযমের গুরুত্ব অনেক। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়। আকর্ষণ মানুষের চিন্তাকে বিভ্রমে নিমজ্জিত করে। অতঃপর মানুষ অশালীন কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই নিষিদ্ধ দৃষ্টিপাত থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। অন্যথায় নিষিদ্ধ দৃষ্টিপাত রোজার শক্তিকে স্তিমিত করে দেবে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে।’ -সুরা নুর ৩০-৩১
চোখের দৃষ্টি যৌনস্পৃহার উদ্বোধক। তাই প্রথমে দৃষ্টিকে হেফাজত করতে বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে। দৃষ্টিকে হেফাজত করতে পারলে চিন্তশক্তি বিভ্রমে নিমজ্জিত হবে না। আর চিন্তায় যদি শালীনতা থাকে তাহলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। ইবাদতসমূহের মধ্যে পাপ মার্জনায় রোজা বেশ শক্তিশালী। রোজা পাপকে জ্বালিয়ে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তোলে। আর পরকালের জন্য সঞ্চয় করে অজস্র পুণ্য। যার আধিক্যের কোনো হিসাব মানুষের ধরাছোঁয়ায় নেই। মানুষের কাছে তা অবর্ণনীয়। এই যে রোজার অবর্ণনীয় সওয়াব, তা যথাযথভাবে অর্জন করার জন্য প্রয়োজন জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলা। অন্যথায় রোজা হবে কেবল না খেয়ে থাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।