জুমবাংলা ডেস্ক: সমাজের শত বাধা পেরিয়ে ভ্যানচালক বাবা আজ সফল। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ি ইউনিয়নের অজপাড়াগাঁ বেলসাড়ার দরিদ্র ভ্যানচালক আফতাবুর রহমানের মাটির ঘরে যেন চাঁদ উঠেছে। অভাবের সংসারে মেলেছে রঙিন স্বপ্নের ডানা। বড় ছেলে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ও মেয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একই পরিবারের দুই সন্তানের সাফল্যে খুশি দরিদ্র বাবা, মা, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরাও।
এক ছেলে ও তিন মেয়ে, স্ত্রীসহ ছয়জনের অভাবের সংসারে নানা টানাপড়েন ভ্যানচালক আফতাবুর রহমানের। একদিকে সংসারের খরচ ও অন্যদিকে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। আফতাবুর রহমান জানান, ভ্যান চালানোই তাঁর পেশা। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে দুই থেকে আড়াই শ টাকা রোজগার করেন তিনি। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজের সামান্য যে জমি ছিল তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মুন্না আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র এক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন এবং মেজ মেয়ে আলপনা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছেন। সন্তানদের এমন সাফল্যে দীর্ঘদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও যে কষ্ট তা এখন সুখে পরিণত হয়েছে। সন্তানরা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের সেবা করতে পারে সে জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন তিনি।
৫ শতাংশ জমির ওপর একটি মাত্র কোটাঘরে যেন সত্যি সত্যিই চাঁদ উঠেছে। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে যেন নানা চড়াই-উৎরাই আর সংগ্রাম। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর বাবা-মায়ের উৎসাহে এই সাফল্য বলে দাবি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আলপনা আক্তারের। আলপনা জানান, অভাব কি, বাবা-মা কখনোই তা বুঝতে দেননি। বাবা অনেক কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার করতেন তা থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাবার এই কষ্টকে কখনোই বৃথা যেতে দেবেন না তিনি। বড় চিকিৎসক হয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবা করতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আলপনা।
আলপনার এই সাফল্যে খুশি সহপাঠি ও স্থানীয়রাও। আর দরিদ্র এই পরিবারটিকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. যোবায়ের হোসেন জানান, দারিদ্র্যকে মোকাবেলা করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আলপনা শুধু তার পরিবার নয়, এই উপজেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরিবারের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই তা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।