৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ১২১ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরার মুকুট জিতে নিলেন মেক্সিকোর ফাতিমা বশ।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জমকালো গ্র্যান্ড ফিনালেতে গতবারের বিজয়ী ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া কিয়ের থেইলভিগ তার মাথায় মিস ইউনিভার্সের মুকুট পরিয়ে দেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিচারকের তিরস্কারের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন ফাতিমা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কে এই ফাতিমা বশ?
২০০০ সালের ১৯ মে মেক্সিকোর তাবাস্কোর ভিলাহেরমোসাতে জন্মগ্রহণ করেন ফাতিমা বশ। তার পুরো নাম ফাতিমা বশ ফার্নান্দেজ। ছোটবেলায় ভীষণ প্রাণবন্ত ছিলেন এই সুন্দরী। প্রকৃতির প্রতি গভীর প্রেমও তার তখন থেকেই। পাশাপাশি নিজ দেশের সংস্কৃতির প্রতি ফাতিমার ভালোবাসা মুগ্ধ করেছেন কোটি মানুষকে।
মাত্র ছয় বছর বয়সে কঠিন বাস্তবার মুখোমুখি হন ফাতিমা। মস্তিষ্ক জনিত জটিল রোগ ধরা পড়ে (ডিসলেক্সিয়া, এডিএইচডি) তার। যা তার শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেয়। তবে এই প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ফাতিমাকে। অধ্যবসায় ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি বাধাকে শক্তিতে পরিণত করেন তিনি।
১৬ বছর বয়সে ফাতিমা উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্টে পাড়ি জমান। সোখানে এক বছরের পড়াশোনা শেষ করে মেক্সিকোয় ফেরেন। ফাতিমার শৈশবের স্বপ্ন ছিল মেক্সিকোর ফ্লোর তাবাস্কো সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকুট জয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে ‘ফ্লোর তাবাস্কো’ পুরস্কার জিতে নেন।
পড়ার টেবিলে ফাতিমা বেছে নিয়েছিলেন ফ্যাশনকে। ফ্লোর তাবাস্কো জয়ের পর মেক্সিকো সিটির ইউনিভেরসিডাড ইবেরোমেরিকানাতে ফ্যাশন এবং পোশাক ডিজাইনে ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর পড়তে যান ইতালি। দেশটির মিলানে নুওভা আক্কাদেমিয়া ডি বেল্লে আরতি-তে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করেন তিনি।
সদ্য মিস ইউনিভার্সের মুকুটজয়ী ফাতিমা পরিবেশ সচেতন ও মানবিক হৃদয়ের অধিকারী। বেশকিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। গত নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। প্রতি বছর এই শিশুদের জন্য তাবাস্কোর অনকোলজি হাসপাতালে বার্ষিক ক্রিসমাস খেলনা বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি।
ফাতিমার সামাজিক উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রুটা মোনার্কা’ এবং ‘কোরাজোন মিগ্রান্তে’। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে তিনি পরিবেশ সচেতনতার সঙ্গে মানবিক সহায়তার কাজ করেছেন। অভিবাসীদেরও সমর্থন করেন ফাতিমা। পাশাপাশি সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য ও আশার বার্তা প্রচারের জন্য কাজ করেন।
শুধু সুন্দরী-ই নন ফাতিমা, যথেষ্ট আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন ও সাহসীও বটে। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা চলাকালীন দিয়েছেন সে পরিচয়। প্রতিযোগিতার মূল পর্ব শুরুর আগে প্রতিযোগীদের নিয়ে প্রিপ্যাজেন্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ।
ওই অনুষ্ঠানের নিয়ম হচ্ছে, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজক দেশের একটি প্রোমোশনাল ভিডিও তৈরি করতে হয় প্রতিযোগীদের। সেসব পোস্ট করতে হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রিপ্যাজেন্ট অনুষ্ঠানের জন্য আনুষ্ঠানিক ফটোশুটের বাইরেও কিছু ছবি তোলা হয়। তবে সেসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে সময়মতো প্রকাশ করতে পারেননি ফাতিমা। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মিস ইউনিভার্স থাইল্যান্ডের পরিচালক নাওয়াত ইতসারাগ্রিসিল। চটে গিয়ে ফাতিমাকে সবার সামনে ‘ডাম্বহেড’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। যা আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত করে তার।
পাল্টা জবাব দেন ফাতিমা। পরিচালককে সরাসরি বলে বসেন, ‘আপনি আমাকে একজন নারী হিসেবে যথাযথ সম্মান দিচ্ছেন না।’
এতে চটে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে তাকে শাসানোর চেষ্টা করেন সঞ্চালক। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি প্রতিকূলে। মিস ইউনিভার্স মেক্সিকোর পাশে দাঁড়ান বাকি প্রতিযোগীরা। প্রতিবাদস্বরূপ হল ত্যাগ করেন তারা। ঘটনাটি দেখতে পান গোটা বিশ্ববাসী। কেননা ওই ইভেন্ট ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। এতে দুনিয়াব্যাপী জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় ফাতিমার। পাশাপাশি অনুষ্ঠান বর্জনে বাকি প্রতিযোগীদেরও সমর্থন করেন বিশ্ববাসী।
এদিকে ঘটনার পর ফাতিমা এক সাক্ষাৎকারে বলেন,‘একুশ শতকে এসে একজন নারী কখনোই হাতের পুতুল হয়ে থাকতে পারে না। যা ইচ্ছা তা–ই বলতে পারেন না কিংবা সাজাতে পারেন না। আমি এখানে এসেছি সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করতে। আমাকে অসম্মান করা মানে পুরো নারী জাতিকে অসম্মান করা।’
এরপর আর উচ্চবাচ্য করেননি সঞ্চালক। ভিন্ন ভিন্ন তিনটি জায়গায় নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চান তিনি। কিন্তু তাতেও মন গলেনি মেক্সিকান সুন্দরীর। ফলে পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া নাওয়াতকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ।
মূলত এভাবেই মুকুট জয়ের আগেই বিশ্ববাসীর জনপ্রিয়তার মুকুট ঝুলিতে নেন ফাতিমা। অতঃপর মিস ইউনিভার্স ২০২৫ এর মুকুট মাথায় পরলেন সাহসী এ সুন্দরী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



