জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে ফজলির চেয়ে আম্রপালি জাতের আমের দাম বেশি। পাশাপাশি কোরবানির ঈদের পর থেকে আমের বাজারে ক্রেতা কমেছে ব্যাপকহারে। একইসঙ্গে কমছে দামও। তবে এখনও বাজারে আম্রপালির চাহিদা থাকলেও উল্টো চিত্র ফজলির ক্ষেত্রে।
রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায় ঢাকার গাড়ির বাসস্ট্যান্ডের পাশে ফুটপাতে আম বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। তারা রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করেন। ঈদের পর থেকেই খুচরা আমের এই বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আম ব্যবসায়ী রুবেল আলী বলেন, ‘ঈদের পর ব্যবসা একেবারে খারাপ যাচ্ছে। সঙ্গে বৃষ্টিতো আছেই। বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা ঠিকমতো আসছে না। বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হচ্ছে।’
আরেক ব্যবসায়ী তারা মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করেছি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ল্যাংড়া জাতের আম। এই আম ঈদের আগে শেষ হয়ে যায়। এরপর আম্রপালি আর ফজলি আসে। তবে এই আমগুলোতে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। আম্রপালি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে তাই তার দামও বেড়েছে। কিছুদিন পর থেকে বারি-৪ ও আশ্বিনা পাওয়া যাবে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর আম্রপালির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লখনা আম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে। সেখানকার ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে আমের বাজার খারাপ হচ্ছে। আমও শেষের দিকে। প্রতিবছর এই সময় দাম বাড়তে থাকে। এবার বৃষ্টির কারণে চিত্র উল্টো। বিক্রি না করলে পচে যাবে। তাই কম দামে হলেও আম বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এতে লাভ থাকছে না।’
একই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মিঠু ইসলাম বলেন, ‘বুধবার (১২ জুলাই) ফজলি আম মণ প্রতি এক হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ ও আম্রপালি দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে দাম আরেকটু বেশি ছিল। তবে এখন দাম কমে যাচ্ছে।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘যে বৃষ্টি হচ্ছে তা কৃষির জন্য ভালো। চাষিরা আমন ধানের জন্য জমি প্রস্তুত করে নিতে পারছেন। পাট গাছ দ্রুত বেড়ে উঠবে। শুধু চরাঞ্চলে যেসব তিল কেটে রাখা হয়েছে, সেগুলো মাড়াই করতে সমস্যা হচ্ছে। আমের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টির কারণে একসঙ্গে আম পেকে যাবে। এ কারণে বাজারে তুলতে হবে। তাতে দাম কিছুটা কমতে পারে। তাছাড়া বৃষ্টি থাকলে আমের বাজারজাত প্রক্রিয়ায়ও একটু বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চকর্কীতি ইউনিয়নের চক নাধরা গ্রামের আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার আম্রপালির মণের দর ২৫০০ টাকা। ক্রেতা বলছে ১৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা মণ। ফজলির দর চেয়েছি ১৬০০ টাকা মণ। ক্রেতা বলছে মাত্র ১২০০। আগে শেষ সময়ে ফজলি দিয়ে ব্যবসা করেছি এখন আম্রপালি করতে হচ্ছে। ফজলির জায়গাটা দখল করছে আম্রপালি।’
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী মামলোত হোসেন বলেন, ‘এ বছর আম উৎপাদনে খরচ অনেক বেশি। কারণ উৎপাদন উপকরণের দাম বেশি। যেমন ১২০০ টাকার কীটনাশক এ বছর ১৫০০-তে কিনতে হয়েছে। স্প্রে মেশিন বাবদ গত বছর খরচ হয়েছে ১৬০০ টাকা। এ বছর বেড়ে হয়েছে দুই হাজার। গতবার একজন শ্রমিকের মূল্য ছিল ২৫০ এবার দিতে হয়েছে ৩৫০ টাকা। সে হিসাবে প্যাকেটসহ এক মণ আম উৎপাদনে খরচ হয়েছে সাড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। প্যাকেট ছাড়া এক মণ আম উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সে হিসাবে বিক্রি দর কম হওয়ায় বিশেষ করে যারা সরাসরি আমচাষির লোকসান হচ্ছে। যেমন আমার আশ্বিনা আমে প্রচুর লোকসান হচ্ছে। কারণ আশ্বিনার দর বর্তমানে সাড়ে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণ।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জে হাজার হাজার আমচাষি উৎপাদন খরচ পাচ্ছেন না। বর্তমানে জেলার কানসাট আম বাজারে ফজলি ১২০০ থেকে ১৪০০, প্যাকেট করা ফজলি ১৭০০ থেকে ১৯০০, আশ্বিনা ৪৫০ থেকে ৬৫০, লখনা ১৮০০ থেকে ২৫০০, প্যাকেট করা ল্যাংড়া ২৫০০ থেকে ২৭০০, আম্রপালি ও বারি-৪ ২২০০ থেকে ২৮০০, প্যাকেট করা আম্রপালি ও বারি-৪ আমের মণ ৩৫০০ থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন শামীম খান বলেন, ‘পুরান বাগান ও পুরান জাতের আম উৎপাদন করায় শিবগঞ্জের হাজার হাজার চাষি লাভবান হতে পারছে না। আধুনিক বাগান ও আধুনিক জাতের আম ছাড়া ব্যবসায়ী ও চাষিরা লাভবান হতে পারছেন না। যারা আধুনিক বাগান তৈরি করে আধুনিক আম উৎপাদন করেছে তারাই লাভবান হচ্ছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট-শ্যামপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, ‘ফজলি ও আম্রপালি বাজারে একসঙ্গে নামার কারণে দাম কমেছে। দিন দিন ফজলির চাহিদা কমায় লোকসানে চাষিরা গাছ কেটে ফেলছেন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিকের দাবি, বাগানের গাছে এখনও ৮০ শতাংশ ফজলি ঝুলছে। তিনি বলেন, ‘ফজলির চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষি ও বাগান মালিকরা লোকসান গুনছে দীর্ঘদিন থেকে। যতদিন না ফজলি আমের প্রসেসিং করে বাই প্রোডাক্ট (আচার, আমসত্ত্ব জাতীয় খাবার) হবে ততদিন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন আম চাষাবাদ হচ্ছে। এখনও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে আমের হাট থাকায় সেসব হাটে ব্যাপারীদের আনাগোনা বাড়ছে একই সঙ্গে কানসাট বাজারে কমছে। ফলে ফজলির চাহিদা কমেছে। চাষিরাও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফজলি আমের দাম বৃদ্ধি করতে বিশ্ববাজারে রফতানিতে ব্যাপক জোর দিচ্ছে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন আম রফতানিকারকের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির বিদেশের বাজারে রফতানি হবে ফজলি আম।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, ‘আম্রপালির গুণগত মান এবং মিষ্টতার কারণে এর চাহিদা প্রচুর। বাগান থেকেই আম বিক্রি করা যাচ্ছে। ঘন আম বাগানগুলোতে আম্রপালির চাষ বেড়েছে। জেলায় আট হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে ফজলির চাষাবাদ হচ্ছে। এতে গাছ রয়েছে ছয় লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫টি। অন্যদিকে দুই হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৪৬ হাজার ১০৫টি গাছে আম্রপালি চাষাবাদ হচ্ছে।
এবার জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।