জুমবাংলা ডেস্ক : কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাকায় পানির স্থর নিচে নামা। গত ৫০ বছরে ঢাকার পানির স্তর নেমেছে ৮৩ মিটার। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট, অন্যদিকে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। প্রশ্ন উঠেছে ওয়াসার ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের সফলতা নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ভারসাম্য রাখতে দরকার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন।
আজিজ মিয়া। তার দল নিয়ে গত কয়েক দশক ধরেই কাজ করছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সয়েল টেস্টের। করেছেন টিউবয়েল বসানোর কাজও। বোরিং করতে গিয়ে গত বিশ বছর আগেও পঞ্চাশ থেকে সত্তর ফুটের মধ্যেই মিলতো পানির অস্তিত্ব। তবে গত কয়েকদিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এসে একশ’ ফুট নিচে গিয়েও খেই হারাচ্ছে পানির স্তর।
একই অবস্থা ঢাকার মধ্যে ওয়াসার পাম্পগুলোতে। তাইতো একটির বদলে একই এলাকায় বসানো হচ্ছে একাধিক পাম্প। যারা এই কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের মতে, ২০ থেকে ২২ বছর আগে একটি পাম্প দিয়ে ভালো পানি পাওয়া যেত, এখন দু’টি পাম্প না হলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ২ থেকে ৩ মিটার করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ বছর আগেও ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ২ থেকে ৩ মিটারের মধ্যে ছিল। বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এভাবে নামতে থাকলে এক সময় ঢাকায় পানি সরবরাহ করা দুরূহ হয়ে যাবে।
পানির স্তর নেমে যাওয়া বন্ধে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৭ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি মেগা প্রকল্প নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে পানি সংগ্রহের হার ৭৮ ভাগ থেকে ৩০ ভাগে নামিয়ে আনা। সেখানে ১০ বছরে মাত্র ১৩ ভাগ উৎস কমানো সম্ভব হয়েছে। এতে আর ২০২৫ সালের মধ্যে ভূউপরিস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের হার ৭০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব হবে কি-না, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজধানীতে সরবরাহকৃত পানির ৭৮ শতাংশই ভূগর্ভস্থ পানি। বাকি ২২ শতাংশ ভূউপরিস্থ। ২০২৫ সালের মধ্যে ভূউপরিস্থ পানির উৎস ৭০ ভাগে উন্নীতের ঘোষণা দিলেও তাদের দাবি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৭৮ ভাগ থেকে কমে ৬৫ ভাগে চলে এসেছে। বাকি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু হলে ৭০ ভাগে চলে আসবে।
ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (আরপিডি) ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচির মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ কোটি লিটার পানির চাহিদা পূরণ করার পরিকল্পনা আছে। এসব পূরণ হলে ৭০ ভাগ ভূগর্ভস্থ পানি দেয়া সম্ভব হবে।
তথ্য বলছে, প্রতি বছর ২ থেকে ৩ মিটার করে পানির স্তুর নেমে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ একদিকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, অন্যদিকে ঢাকাকে ইট-পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া। ফলে বৃষ্টির পানি সহজে মাটিতে যেতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসা যেসব প্রকল্প নিয়েছে, সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল। তাছাড়া ঢাকা থেকে বহুদূরে গিয়ে পানি এনে সরবরাহ করাতে খরচও বেড়ে যাবে। আর এখন ঢাকার জনসংখ্যার যে হিসাব ধরে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছর পর তো সেই জনসংখ্যায় আটকে থাকবে না।
এমন অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলছেন, এখানে সিটি করপোরেশন, রাজউক, ওয়াসা- কারো মধ্যে সমন্বয় নেই। এরমধ্যে ইট-পাথরে ঢাকা অনেকটা ঢেকে গেছে। ফলে পানি মাটির নীচে প্রবেশ করতে পারছে না। এদিকে নজর দিতে হবে। অন্যথায় বড় হুমকি সামনে অপেক্ষা করছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে যেখানে ঢাকায় গভীর নলকূপ ছিল ৭৯৫টি, ২০২১ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০৬টিতে। গভীর নলকূপের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকাও ভুগর্ভস্থ পানির জন্য বড় হুমকি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।