জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে কুমিল্লায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বেশকিছু এলাকা। এরমধ্যে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও বরুড়া উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যার পানি।
এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আকস্মিক এ বন্যা। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গোমতীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ১ সেন্টিমিটার কমলে আবার ১ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের শশীদল সালদা নদীর বেড়িবাঁধও ভেঙে প্লাবিত হয় ব্রাহ্মণপাড়া। দুই নদীর ভাঙনে এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৭০ হাজার পরিবার।
পানিবন্দি হয়ে তিতাস উপজেলার হাজার হাজার মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন, উচু ভবন কিংবা স্কুল, কলেজ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলার নতুন করে বন্যার পানি প্লাবিত হয়েছে দেবিদ্বার উপজেলায়। উপজেলার প্রশাসন জানান, দেবিদ্বারের সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় এলাকার গ্রাম গুলোতে বন্যার ব্যাপক পানিতে ডুবিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি।
অন্যদিকে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায়ও গতকাল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যার পানি। এইসব এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে এখন ছুটছেন অন্যস্থানে আবার অনেকে আশয়কেন্দ্রে নিরাপদে যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে গোমতির পানি কমেছে। তবে গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। পানি না কমা পর্যন্ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতেই থাকবে।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে যোগাযোগ করলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলি জানিয়েছেন, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১৮টি ইউনিয়নের এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯ মানুষ। আমরা বন্যার্তদের মাঝে প্রতিদিন ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত আছে।
এদিকে, ফেনী জেলার বন্যার পানি আরও কমেছে। তবে, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার কিছু লোকালয়ে এখনও বন্যার পানি থাকলেও অন্যান্য উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিমুক্ত রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা জুড়ে আটদিনের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দাগনভূঞাতেও বন্যার পানি কমছে। তবে, উপজেলার রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, রামনগর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, জায়লস্কর, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কিছু স্থানে মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
বন্যা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবেদিতা চাকমা বলেন, বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা নিজ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের কাছে শুকনো খাবার পানি পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। জুড়ি নদী ছাড়া জেলার সব ক’টি নদীর পানি বিপদসীমার নিচে। ভবানীপুর এলাকায় জুড়ি নদীর পানি বিপদসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষের চুলায় জ্বলছে না আগুন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।