মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জে পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকার পরেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক উপজেলায় থেকে অন্য উপজেলায় সার পাচার করছে অসাধু কিছু সার ডিলাররা। এতে করে বেশি দামে সার ক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্ত্রিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
সোমবার দিনভর জেলার শিবালয় এবং ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিনে এসব তথ্যের সতত্যা পাওয়া যায়।
জেলার শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নে সারের খুচরা ডিলার মের্সাস আবজাল ট্রেডার্স এর মালিক আবজাল হোসেন ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের নিকট সরকার নির্ধারিত দামের অধিক মূল্যে সার বিক্রি করছে দেদারসে। কৃষকদেরকে দিচ্ছে না ক্রয় রশিদও। সরেজমিনে এমন বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের ধুলন্ডী এলাকার কৃষক আজিজ হোসেন। আবজাল ট্রেডার্স থেকে দুই বস্তা ডিএপি, এক বস্তা এমওপি এবং দুই বস্তা ইউরিয়া সার ক্রয় করেন ৬ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে। কিন্তু সরকারিভাবে এসব সারের সর্বমোট বাজারধর নির্ধারিত ৫ হাজার ৮০০ টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবজাল ট্রেডার্স এর মালিক আবজাল হোসেন বলেন, এক উপজেলার সার অন্য উপজেলায় বিক্রির নিয়ম নাই। কিন্তু পাশাপাশি এলাকা হওয়ায় তিনি ওই সারগুলো বিক্রি করেছেন।
তবে কৃষক আজিজের মতো আরও অনেক কৃষকই বাড়তি দাম দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত সারগুলো সংগ্রহ করছে আবজালের নিকট থেকে।
এসব বিষয়ে আলাপ হলে শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার বলেন, এক উপজেলার ডিলার অন্য উপজেলার কৃষকদের নিকট সার বিক্রি করার কোন নিয়ম নেই। সার বিক্রেতা আবজালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে এবং সরেজমিনে ভিজিট করে শিগগিরই তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে মন্তব্য করেন।
একই উপজেলার বরঙ্গাইল বাজারের নিজাম উদ্দিন ট্রেডার্স এর মালিক নিজাম উদ্দিন বাড়তি দামে এলাকার কৃষকদের নিকট সার বিক্রি করছেন দেদারসে। তার সংগ্রহে টিএসপি সার না থাকায় ঘিওরের দিবা স্টোর থেকে পিকআপ বোঝাই করে সার নিচ্ছেন তিনি। এতে করে সারগুলো বহনে বাড়তি খরচও হচ্ছে। আবার এক উপজেলার সার অন্য উপজেলায় নেওয়ার নীতিমালাও নেই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, ঘিওর দিবা ট্রেডার্স এর মালিক রিমনের নিকট থেকে ৩০ বস্তা সার আনেন সোমবার সন্ধ্যায়। পরে সারগুলো তার দোকানে স্টক করে রাখেন। তার এলাকায় টিএসপি সারের বাড়তি চাহিদা থাকায় তিনি ঘিওর থেকে সার এনে কৃষকদের নিকট বিক্রি করছেন বলে স্বীকার করেন অকপটে।
এদিকে দিবা ট্রেডার্স এর মালিক রিমন হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, এক উপজেলার সার অন্য উপজেলায় দেওয়ার বিধান নেই। তবুও তিনি শিবালয় উপজেলায় সার দিয়েছেন। যা করা তার ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘিওরে টিএসপি সারগুলো আজকেই বরাদ্দ হয়েছে। এই সারগুলো অন্য উপজেলায় দেওয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল থেকে সারগুলো উদ্ধার করার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন কৃষক ও সার ডিলারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রত্যেকটি ইউনিয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সার সরকারিভাবে বরাদ্দ হয় এবং যথা সময়ে তা ডিলারদেরকে দেওয়া হয়। কিন্তু অসাধু কিছু ডিলার এক জায়গার সার অন্য জায়গায় পাচার করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এতে করে প্রতি বস্তা সার ক্রয়ে কৃষকদেরকে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। এসব ডিলার চিহ্নিত করে তাদের ডিলারশিপ বাতিল করলে সবাই সচেতন হয়ে যাবে। আর ন্যায্যমূল্যে সার ক্রয়ে লাভবান হবে কৃষকেরা।
সার পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সার পাচার রোধে দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দামে সার পাবে জেলার সকল কৃষক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।