বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ডুমুরের ছাতার মতো বড় পাতাটির নিচে ভোরের দোয়েল দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, তাই পৃথিবীর রূপ আর খুঁজতে চাননি। ফুল নেই বলেই হয়তো জীবনানন্দ ডুমুরের পাতার ছায়ায় মমতা খুঁজেছিলেন, কিন্তু যদি ফুল দৃশ্যমান থাকত, তাহলে ‘বাংলার মুখ’ কবিতার এ লাইন কি বদলে দিতেন? ফুলের সৌন্দর্য দেখে কি অন্যভাবে লিখতেন অন্য কোনো কবিতা? এ প্রশ্ন আপাতত তোলা থাক, তার আগে বলুন ডুমুরের কি ফুল হয়?
জানি, একটু যাঁরা চোখ-কান খোলা রাখেন, তাঁরা বলবেন ফুল হয় না ডুমুরগাছের। কিন্তু নানা গল্পই তো চালু থাকে সমাজে, কেউ কেউ বলেন, ডুমুরের ফুল ফোটে, তবে আমাদের চোখে পড়ে না। কারণ, ডুমুরের ফুলের নাকি ভারি লজ্জা, তাই মানুষকে মুখ দেখায় না।
তারা বলেন ডুমুরের ফুল ফোটে মধ্যরাতে, যখন কেউ জেগে থাকে না। আচ্ছা, লজ্জা কি শুধু ডুমুরের; বট-পাকুড় বা অশ্বত্থের লজ্জা নেই?
ডুমুরের ফুল হয় না, এটা নিয়ে সবাই কথা বলেন, কিন্তু বট-পাকুড় ও অশ্বত্থেরও যে ফুল হয় না সে খবর কজন রাখেন?
এখানেই গল্প শেষ নয়, কেউ যদি ডুমুরের ফুল দেখে ফেলে রাতে, তাহলে সে নাকি গুপ্তধনের সন্ধান পাবে এবং রাতারাতি বড়লোক বনে যাবে।
এগুলো আসলে কুসংস্কারের কথা, আর দশটা ফুলের মতো যদি ডুমুরের ফুল ফুটত, সেটা মধ্যরাতে হলেও বিজ্ঞানীদের চোখ এড়াত না। অর্থাৎ স্বাভাবিক অর্থে ফুল যেভাবে ফোটে, ডুমুরের ফুল সেভাবে ফোটার কোনো সুযোগ নেই।
তবে ডুমুরে ফুল ফোটে। কারণ, বীজ ছাড়া বংশবিস্তারের অন্য পদ্ধতি নেই এদের। যেসব উদ্ভিদের অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়, তাদের ফুল না ফোটালেও চলে। কিন্তু ডুমুরের সে সুযোগ নেই।
তাই ডুমুরের ফুল ফোটে। কিন্তু আমরা সেটা দেখতে পাই না।
কেন দেখতে পাই না?
অনেকে বলেন, ডুমুরের ফুল ফোটে কাণ্ডের ভেতর, তাই দেখা যায় না। এ কথাও আসলে ঠিক নয়। ডুমুরের যে ফলটা দেখি, সেটা শুধু ফল নয়, একই সঙ্গে ফুলও।
ডুমুর যখন ছোট, তখন সেটা আসলে ফুল; বড় হলে ফল। ডুমুর যখন ফুল তখন ওর ভেতরটা বেশ ফাঁপা থাকে। তার ভেতর থাকে পুংকেশর, গর্ভাশয়, পরাগরেণু। অর্থাৎ ডুমুরের ফুলটা আসলে খোসা দিয়ে মোড়ানে।
তা-ই যদি হয়, ফুলের পরাগায়ণটা কিভাবে ঘটে?
বেশির ভাগ ফুলেই মধু থাকে। কীট-পতঙ্গ মধুতে আকৃষ্ট হয়ে ফুলের কাছে এসে পরাগায়ণ ঘটিয়ে যায়। ডুমুরের ফুলে মধু নেই, তার ওপর আবার খোলস দিয়ে ঢাকা, পোকারা কেন আকৃষ্ট হবে?
এক ধরনের খুদে বোলতা পরাগায়ণের কাজটা করে। বোলতাগুলো খুব ছোট, ডানাওয়ালা পিঁপড়ার মতো। এদের ঢোকার বন্দোবস্ত আছে ডুমুরের ভেতরে। ডুমুরের ফুলের মাথায় অর্থাৎ বোঁটার ঠিক উল্টো দিকে খুব সূক্ষ্ম একটা ছিদ্র থাকে। খুব ভালো করে না দেখলে বোঝা যায় না। আর এই বোলতার যে আকার, খুব সহজেই ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।
এখানেও আবার সেই আগের প্রশ্ন, ঢোকার বন্দোবস্ত না হয় হলো, কিন্তু বোলতার লাভ কী ভেতরে ঢুকে, মধু তো নেই?
ডুমুরের ফুলে মধু না থাকলেও এদের বীজ বেশ পুষ্টিকর, অন্তত বোলতাদের জন্য। তাই ফুল অবস্থায় যখন থাকে ডুমুরগুলো, সে সময় বোলতারা ডিম পেড়ে আসে ফুলের ভেতর। আর ডিম পাড়তে গিয়েই পরাগরেণু মাখামাখি করে ডুমুরের ফুলের পরাগায়ণ ঘটিয়ে ফেলে অজান্তেই। বোলতার ডিম ফুটে যত দিনে শুককীট বের হয়,তত দিনে ডুমুরের ভেতর নরম-নরম বীজ তৈরি হয়, সেই বীজ বোলতার শুককীটের প্রিয় খাদ্য।
সুতরাং আর দশটা ফুলের মতো বাইরে না ফুটলেও ডুমুরের খোলসের ভেতরে ঠিকই ফুল ফোটে। স্বাভাবিক নিয়মেই সেই ফুলের পরাগায়ণ ঘটে। একই পদ্ধতিতে পরাগায়ণ ঘটে বট-পাকুড় অশ্বত্থেরও। এরা ডুমুরের জাতভাই কিনা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।