আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিস্তৃত জলরাশির মাঝে ভাসছে একটি নৌকা। নেই কোনো মাঝি। নৌকার আরোহী বলতে দুটো বানরছানা। এদের একটিকে আক্রমণ করছে পানিতে ভেসে আসা দুটি কুকুর। কুকুরের আক্রমণ থেকে ছানাকে রক্ষার জন্য প্রাণান্ত লড়াই করছে সঙ্গী বানর।
সিলেট আর সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার মাঝে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এটি দেখে আঁতকে উঠছেন সবাই।
নেটিজেনদের অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, বন্যায় মানুষের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে পশুপাখির জীবনেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। কেউ কেউ এই ভিডিওটি না করে বরং বানর দুটিকে বাঁচানোর চেষ্টার ওপর জোর দিচ্ছেন।
https://www.facebook.com/watch/?v=478735363460219
ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। তাতে দেখা গেছে ভিডিওচিত্রটি সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার সময়কার নয়। এমনকি পুরো দৃশ্যায়নটি অভিনয়ের অংশ। যে দুটি বানর এই অভিনয়ে অংশ নিয়েছে ওদের নাম ‘লোরা’ এবং ‘কাকা’। আর ‘অভিনয়শিল্পী’ হিসেবে ভিডিওতে অংশ নেয়া মোটাতাজা কুকুর দুটির নাম ‘লাকি’ ও ‘লুকাস’।
এক বানরপ্রেমী নারী ‘মাঙ্কি ড্রিম’ নামে চালাচ্ছেন একটি ফেসবুক পেজ। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ২০২১ সালের ৩ মে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ বার। ৬ লাখ ১৫ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিওতে রিঅ্যাক্ট করেছেন। কমেন্টের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারে।
‘কাকা’ ও ‘লোরা’কে নিয়ে এ ধরনের অনেক ভিডিও রয়েছে ফেসবুক পেজে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখানো হয় বিপজ্জনক বা অদ্ভুত পরিস্থিতি কী করে সামাল দিচ্ছে বানর দুটি।
ফেসবুক পেজটিতে কাকা ও লোরার সঙ্গে ওই নারীর ছবি থাকলেও নিজের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেননি। তবে যোগাযোগের যে নম্বর তিনি দিয়ে রেখেছেন, সেটা দেখে আন্দাজ করা যায় ওই নারী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ক্যাম্বোডিয়ার নাগরিক। তার শারীরিক গঠন ও চেহারাও ক্যাম্বোডিয়ানদের মতো।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ ফেসবুক পেজে আপলোড করা আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে সেটা গত দুই দিনে বাংলাদেশে ভাইরাল করা হয়েছে। পুরো ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকাটি মোটেই মাঝিহীন অবস্থায় ভাসছিল না। এটি একটি গাছের লম্বা কাণ্ডের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা।
আর ভিডিওতে বিস্তৃত জলরাশি দেখা গেলেও বাস্তবে নৌকার কিছুটা পাশেই ছিল পুরোপুরি শুকনো তীর।
কুকুর দুটির সঙ্গে ‘লড়াইয়ের অভিনয়ের’ একপর্যায়ে বানর দুটি ওই কাণ্ডের মাথায় চড়ে বসে। পরে কুকুর দুটিও নেমে তীরে চলে যায়।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কাকা ও লোরাকে স্থানীয় একটি বন থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। বাঘ, শিয়ালের মতো হিংস্র প্রাণীরা শাবক জোড়াকে শিকারের চেষ্টা করছিল। গ্রামবাসী উদ্ধার করার পর শাবক দুটিকে আদর মমতায় বড় করছেন ওই নারী। আর ‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজটি তিনি চালু করেন ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর।
প্রায় ৫ বছর আগে পেজটি খোলা হলেও প্রথম ভিডিও পোস্ট করা হয় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ। অবশ্য সেটি ছিল নম বাকেংয়ের পর্বতে সূর্যোদয়ের দৃশ্য।
বানর শাবক লোরাকে নিয়ে প্রথম ভিডিওটি আসে ২০২০ সালের ১০ জুলাই। আর কাকার ভিডিও আসে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট। এরপর থেকে নিয়মিত লরা ও কাকার নতুন নতুন ভিডিও পোস্ট করেছেন পেজের অ্যাডমিন।
পেজটিতে ওই নারী নিজেকে বানর শাবক দুটির ‘মা’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। আর নিজের স্বামীকে নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরেছেন বানরছানা দুটির ‘বাবা’ হিসেবে।
কখনও কুকুরের সঙ্গে শাবক দুটির খুনসুটি, কখনও দুধ খাওয়ানো, কখনও সেগুলোকে গোসল করানোর ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে পেজটিতে।
সবশেষ ভিডিও পোস্ট করা হয় গত বছরের ২৮ নভেম্বর। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মা পরিচয় দেয়া সেই নারীকে ঘিরে খুনসুটিতে মেতেছে বানরছানা দুটি।
‘মাঙ্কি ড্রিম’ পেজ খোলার ব্যাখ্যা দিয়ে লেখা হয়েছে, এই পেজের মাধ্যমে বানরের জীবন, বেড়ে ওঠা, নাওয়া, খাওয়া, ঝগড়া, খুনসুটি, প্রজনন সবকিছু নেটিজেনদের সামনে তুলে ধরতে চায় শাবক দুটির বর্তমান অভিভাবক। এ ছাড়া পোষা পাখি, প্রাণীরও নানা দিক এই পেজের মাধ্যমে তুলে ধরার ইচ্ছা রয়েছে তার।
সবার কাছে নিবেদনও রেখেছেন প্রাণিপ্রেমী। পেজটিতে অন্তত হাজার দশেক মানুষ লাইক করুক এবং হাজার দশেক অনুসারী থাকুক- এটা তার প্রত্যাশা। তবে পেজটিতে লাইকের সংখ্যা এখনও সেই প্রত্যাশা পূরণ করেনি। সংখ্যাটি মাত্র চার হাজার ৩৬৭। তবে অনুসারী আছেন ৪৫ হাজার ২২৭ ফেসবুক ব্যবহারকারী। সূত্র : নিউজবাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।