দীর্ঘ ২৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাস উৎখাত ও জিম্মি মুক্তির নামে প্রতিদিনই অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা। দেরিতে হলেও টনক শেষ পর্যন্ত টনক নড়েছে পশ্চিমা বিশ্বের। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও নারকীয় গণহত্যা বন্ধের জন্য ফিলিস্তিনকে এবার স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর তিন রাষ্ট্র।
এদের মধ্যে আছে খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির মূল কারিগর যুক্তরাজ্য। অন্য দুটি দেশও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবেই পরিচিত—কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। কয়েক ঘণ্টা না পেরোতেই তাদের দলে যোগ দিয়েছে আরেক ইউরোপীয় দেশ পর্তুগাল।
এতে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার পরম বন্ধুখ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ফিরে মিত্রদের এমন পদক্ষেপের মোক্ষম জবাব দিবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশগুলোর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে ‘নাটকীয় প্রদর্শনী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। একইসঙ্গে তাদেরকে রীতিমতো ধমকাতে শুরু করেছে মার্কিন রিপাবলিকান নেতারা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে দ্য গার্ডিয়ান ও টাইমস অব ইসরায়েল এসব তথ্য জানিয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াকে নাটকীয় প্রদর্শন বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মনোযোগ কেবল গুরুতর কূটনীতিতে, নাটকীয় পদক্ষেপে নয়। আমাদের অগ্রাধিকার স্পষ্ট—জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং গোটা অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি।’
এ সময় ট্রাম্প তার বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার জন্য হামাসকে দায়ী করেন।
এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান নেতারা। এ পদক্ষেপকে ‘হঠকারী’ উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর দপ্তরে চিঠিও পাঠিয়েছেন ২৫ জন আইনপ্রণেতা। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন টেড ক্রুজসহ কয়েকজন মার্কিন সিনেটর।
এর আগে রবিবার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা বিভীষিকার মুখে শান্তি এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা কাজ করছি।
এছাড়া, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি প্রতিশ্রুতি দেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল—উভয় রাষ্ট্রের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় কাজ করবে কানাডা।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও সান মারিনো। এমনটা হলে বিষয়টি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মিত্রদের থেকে ক্রমশ আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মিত্রদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আরেকটি বার্তা আছে আপনাদের জন্য। জর্ডান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ফিরে এলে এ বিষয়ে ইসরায়েলের স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির দখলকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ‘সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্স-এ দেওয়া বার্তায় আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের প্রস্তাবও জমা দেবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে, গত বছর আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ফিলিস্তিনকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।