জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেন সাজ্জাদ হোসাইন হৃদয়। ২০২২ সালের শেষ দিকে সোনালী ব্যাংকে ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি চলতে থাকে বিসিএস জয়ের প্রস্তুতি। কয়েকবার ব্যর্থ হয়েও পৌঁছেন সফলতার চূড়ায়। সাজ্জাদ ৪১তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন। তাঁর প্রথম হওয়ার গল্প, প্রস্তুতি ও নতুনদের জন্য পরামর্শ নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন।
সাজ্জাদ হোসাইন হৃদয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। শৈশবে গ্রামের বাড়িতেই কেটেছে অনেকটা সময়। তবে ক্লাস ফাইভের পরই শহরে পড়াশোনার জন্য চলে আসেন। ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। স্নাতক শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
প্রথম হওয়ার অনুভূতি
ফল জানতে পেরে এখনো মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে আছি। তালিকা দেখে কিছুক্ষণ বিহ্বল ছিলাম। পরিবারের অন্য সব সদস্যের খুশি দেখে আমারও অনেক খুশি লাগছে।
স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার
ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। এ জন্য শিক্ষকদের কাছে প্রিয় ছিলাম। সবাই খুব স্নেহ ও দোয়া করতেন। ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সবাই ভাবত, আমি চিকিৎসক হব। কিন্তু এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ পাই। তাই আর মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে পারিনি। এ কারণে তখন কিছুটা হতাশা কাজ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হলেও সেখানে প্রথমে তেমন মনোযোগ দিতে পারিনি। তবে অনার্সে সিজিপিএ ৩.৩৬ পেয়ে পাস করেছি। সরকারি চাকরির ইচ্ছা থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু। তারপর ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাড়তে থাকে। বিএসসি প্রিলিমিনারি পাস করার পরেই মাথায় আসে বিসিএস দেওয়ার চিন্তা।
বিদেশ যাওয়া বাদ দিয়ে বিসিএস প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করে বিদেশে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে। সে জন্য একটা কোচিংয়ে টাকা দিয়ে জিআরইর জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে সফল হওয়া আমার জন্য অনেক কঠিন হতো। কোনো গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, আইইএলটিএস করা ছিল না, জিআরই করা ছিল না। একদম শূন্য থেকে শুরু করার সাহস করিনি। অন্যদিকে বিসিএস সিলেবাসে যা যা আছে, তার অনেক কিছুই আমার ইতিমধ্যে পড়া ছিল। কারণ, আমি প্রচুর টিউশনি করতাম। গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি—এগুলো আমার দখলে ছিল। তাই ভাবলাম, বিসিএসই দেব। সেখান থেকেই প্রস্তুতি শুরু। কোচিংয়ে ভর্তি হলেও শুধু পরীক্ষা দেওয়া হতো, ক্লাস করতাম না। টিউশনি করিয়ে ক্লাস করার মতো ইচ্ছা ও শক্তি কোনোটাই থাকত না। তবে বাসায় সব সময় ওই পরীক্ষাগুলোর সিলেবাস শেষ করেই যেতাম। কোচিংয়ের পরীক্ষা ভালো করতাম প্রথম থেকেই, ফলে কখনো প্রস্তুতি নিয়ে হতাশায় ভুগতে হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি বিসিএসের বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। যেকোনো তথ্য বা নিউজ দ্রুত পেয়ে যেতাম। অনেকে তাদের গল্পগুলো শেয়ার করতেন, পড়তে ভালো লাগত। এগুলো পড়ে অনুপ্রেরণা পেতাম।
পরিবারের সবার অনুপ্রেরণা পেয়েছি
আমার পরিবারের সবাই আমার জন্য অনুপ্রেরণা ছিলেন। আমি অল্প বয়সে বাবাকে হারাই। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় বাবা মারা যান। এরপর আমার মা আর বড় ভাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমার বোনও অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। বিয়ের পর আমার স্ত্রীও আমাকে সব সময় সাহস দিয়েছে। আমার কিছু বন্ধু ছিল, যারা সব সময় আমাকে সমর্থন করেছে। তারা বলত, আমি চেষ্টা করলেই পারব। সবাই মন ভরে দোয়া করেছেন আমার জন্য। এই দোয়াই আজ আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
তেমন কোনো বাধা ছিল না
পড়াশোনায় আর্থিকভাবে আমার ভাই আমাকে সব সময় সমর্থন দিয়েছেন। আর আমি প্রচুর টিউশনি করার কারণে বই কেনা, পরীক্ষা দেওয়া, কোচিং করা—এসব ব্যাপার নিয়ে আমার কখনো অর্থকষ্টে পড়তে হয়নি। আলহামদু লিল্লাহ, তেমন কোনো বাধা ছিল না। মেসে থাকতাম আমি। সেখানেও মেসমেটরা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। মেসের খালারাও সব সময় আমার জন্য দোয়া করতেন। এগুলো অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য।
নতুনদের প্রতি পরামর্শ
নতুনদের জন্য প্রথমেই শুভকামনা থাকবে। তারা আগে তাদের নিজের পড়াশোনার বিষয় সম্পর্কিত চাকরিগুলোতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুক। বিসিএস অনেক লম্বা সফর। দৃঢ় মনোবল না থাকলে এখানে টিকে থাকা কঠিন। নিয়মিত পড়তে হবে, রুটিন থাকতে হবে। আর নিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিতে হবে। যে বিষয়গুলোতে দুর্বলতা আছে, তার জন্য আলাদা নোট তৈরি করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলো খাতায় এক জায়গায় করে আনা, যেন প্রয়োজনের সময় দ্রুত পাওয়া যায়। গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও মানসিক দক্ষতায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গণিত নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য অনুবাদ আর রচনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আপাতত সৃষ্টিকর্তার দরবারে এই প্রার্থনা জানাচ্ছি, তিনি যেন আমাকে দেশের সেবা করতে পারার মতো শক্তি, মনোবল, দৃঢ়তা দান করেন। ভবিষ্যতে সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে পথ চলতে চাই।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।