চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চীনের শল্যচিকিৎসকেরা। এক নারীর দুর্ঘটনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কান প্রথমে তাঁর পায়ে প্রতিস্থাপন করে সংরক্ষণ করা হয়। পরে দীর্ঘ চিকিৎসা ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শেষে সেই কান আবারও সফলভাবে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিশ্বের প্রথম এমন অস্ত্রোপচারের কথা জানিয়েছে হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

মেডিকেল নিউজ প্ল্যাটফর্ম মেড জে জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় ওই নারীর কান সম্পূর্ণভাবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই সঙ্গে তাঁর মাথার খুলির চামড়ার বড় একটি অংশ ছিঁড়ে যায়। জিনানের শানদং প্রাদেশিক হাসপাতালের মাইক্রোসার্জারি ইউনিটের উপপরিচালক কিউ শেনকিয়াং জানান, ভারী যন্ত্রপাতির আঘাতে ওই দুর্ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত গুরুতর ও প্রাণঘাতী। এতে মাথার চামড়া, ঘাড় ও মুখের ত্বক একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং কানটি মাথার চামড়াসহ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পর মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রথমে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাথার চামড়া মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে দুর্ঘটনার কারণে টিস্যু ও রক্তনালির জালিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এতে করে মাথার টিস্যু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কান পুনঃস্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় কানটি বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। কিউয়ের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল সিদ্ধান্ত নেন, সাময়িকভাবে কানটিকে রোগীর পায়ের উপরিভাগে প্রতিস্থাপন করার। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া।
চিকিৎসকদের মতে, পায়ের ধমনি ও শিরার গঠন কানের রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি পায়ের ত্বক ও নরম টিস্যু মাথার ত্বকের মতোই পাতলা হওয়ায় স্থানান্তরের পর মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের আগে কোনো নথিভুক্ত সফল উদাহরণ ছিল না। পায়ে কান প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল প্রায় দশ ঘণ্টা। কিউ জানান, কানের রক্তনালিগুলোর ব্যাস মাত্র ০ দশমিক ২ থেকে ০ দশমিক ৩ মিলিমিটার হওয়ায় সেগুলো সংযুক্ত করা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর শিরার রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা দেখা দেয়। কানটি কালচে বেগুনি রং ধারণ করলে চিকিৎসকেরা একাধিকবার রক্তক্ষরণ করানোর জটিল কৌশল প্রয়োগ করেন। পাঁচ দিনের মধ্যে প্রায় ৫০০ বার এই প্রক্রিয়া চালাতে হয়।
এই সময়ের মধ্যে রোগীর পেট থেকে চামড়া নিয়ে মাথার খুলির ক্ষত সারিয়ে তোলা হয়। পাঁচ মাসের বেশি সময় পর মাথা ও ঘাড়ের ত্বক সুস্থ হলে এবং পা ও কানের ক্ষত শুকিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা কানটিকে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
গত অক্টোবরে কিউয়ের নেতৃত্বে ছয় ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কানটি ফের মাথায় স্থাপন করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এই সাফল্য মাইক্রোসার্জারির ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে ২ লাখ ৩৫ হাজার প্রবাসীর কাছে ব্যালট প্রেরণ
সান ছদ্মনামের ওই রোগী বর্তমানে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা অনেকটাই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে ভ্রু পুনর্গঠন ও পায়ের ক্ষতচিহ্ন কমাতে আরও কিছু ছোট অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সোর্স: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



