জুমবাংলা ডেস্ক : চাকরির পেছনে না ছুটে মাছের ঘেরে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করে সফল হয়েছেন বরগুনার দুই ভাই। অদম্য ইচ্ছা ও মনোবল নিয়ে এখন স্বাবলম্বী তারা। দুই ভাইয়ের সফলতা দেখে বরই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্য কৃষকরা। কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করে যাচ্ছে তাদের।
২০২১ সালের শেষের দিকে ফরিদপুর থেকে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী ও কাশ্মীরি নামের তিন জাতের বরই গাছের চারা সংগ্রহ করেন বরগুনা সদর উপজেলার কালীর তবক গ্রামের কৃষক ভাই আব্দুল আলিম (৩১) ও বনি আমিন (২৮)। ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮০ শতাংশ জমির মাছের ঘেরে তিন জাতের ৪ শতাধিক বরই চারা রোপণ করেন তারা। গত বছর প্রথমবারের মতো ফলন কিছুটা কম হলেও, এবছর আশার থেকেও বেশি ফলন এসেছে বাগানে। গত এক মাসে ১২০ মণ বরই ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। চলতি মৌসুমে আরও ৪-৫ লাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন বলে ধারণা তাদের।
আব্দুল আলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করি। এরপর কিছুদিন চাকরির পেছনে ছুটেছি। কিন্তু আমার চাকরি হয়নি। আমার ছোট ভাই বনি আমিন এইচএসসি পর্যন্ত লেখা পড়া শেষে আর পড়তে চায়নি। দুই ভাই মিলে পরিকলল্পনা করে ২০২০ সালে প্রথম মাছের ঘের করি। মাছের ঘেরে প্রথমবারেই ২ লাখ টাকার ব্যবসা করি। এরপর ইউটিউব দেখে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে ২০২২ সালে ২০ লাখ টাকা লাভ করি। তরমুজের মতো আমরা বরই চাষ করেও সফল হয়েছি।’
কৃষক বনি আমিন বলেন, ‘বড় ভাই যখন চাকরির পেছনে ছুটে ব্যর্থ হয়েছেন তখন আমিও এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। এই দেশে বহু উদ্যোক্তা কৃষিতে সফলতা পেয়েছেন। আমরা কেন পারবো না! দুই ভাই মিলে দিন-রাত পরিশ্রম করে আমরা মাছ, তরমুজ ও বরই চাষে স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন আর কোনো অভাব নেই আমাদের।’
বল সুন্দরী বড়ই দেখতে আপেলের মতো। এক একটি বরইয়ের ওজন ৫০ থেকে ৬৫ গ্রাম। ভারত সুন্দরী জাতের এক একটি বড়ই ওজন ৪০ থেকে ৪৫ আর কাশ্মীর বরই দেখতে কিছুটা লম্বা এবং আপেলের মতো। এই বরইয়ের ওজন ৫৫ থেকে ৬০ গ্রাম। বরই বিক্রির পাশাপাশি চারা করে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে তারা। দুই ভাইয়ের সাফল্যে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন বরই চাষে।
এলাকার তরুণ কৃষকের তালিকায় নাম লিখিয়েছে সনদ, সুজন, মাইনুল, বাসুদেবসহ অন্তত ২০-২৫ জন। বাসুদেব বলেন, ‘আমরা আলিম ও বনি আমিনের খেতে এখন প্রায়ই সময় দিচ্ছি। কোনো বিনিময় ছাড়াই তারা আমাদের বরই চাষের সব প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিচ্ছেন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আমরাও বড়ই চাষ করবো। আপাতত জমি প্রস্তুত করে রেখেছি।’
বরগুনার মাটির গুনাগুণে বরই চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম। তিনি বলেন, ‘বরগুনার মাটি তরমুজ, বরই ও আম চাষের জন্য উপযুক্ত। এই এলাকার মানুষকে আমরা যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।