জুমবাংলা ডেস্ক : বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় বেচাকেনা হবে বিমা পণ্য। ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে বিমা পণ্য বেচাকেনার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আজ জাতীয় বিমা দিবসে এ সেবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর রোববার ব্যাংকগুলোর কিছু শাখায় এ সেবা মিলবে। পর্যায়ক্রমে তাদের সব শাখায় এবং অন্যান্য ব্যাংকও ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা দেবে। ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল, ডাচ্-বাংলা ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুবই ভালো উদ্যোগ। বিমা পণ্যের বাজারজাতকরণটা ঠিক হচ্ছিল না। ব্যাংকের নেটওয়ার্ক ও ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাটাকে ব্যবহার করে এখন একদিকে বিমা খাত উজ্জীবিত হবে, পাশাপাশি ব্যাংকেরও ব্যবসা বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে বিমা খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা তুলনামূলক কম। তাই ব্যাংকাস্যুরেন্স হতে পারে মানুষের ভরসার জায়গা। কারণ, মানুষ এজেন্টের মাধ্যমে বিমা পণ্য কিনে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়েছে। এখানে যেমন এজেন্টের দায় ছিল, অন্যদিকে বিমা প্রতিষ্ঠানের।
যদি ব্যাংক এ সেবা দেয়, তখন বিমা প্রতিষ্ঠান চাইলে জালিয়াতি করতে পারবে না। কারণ, বিমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের প্রভাব বেশি। আর ক্লেইম সেটেলমেন্ট নিশ্চিত করতে পারলে বিমা খাত এগিয়ে যাবে। আর মানুষেরও আস্থা ফিরে আসবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। তারা আরও বলেন, কোনো দেশের উন্নয়নের প্রথম ধাপ বিমা খাত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে। তাই বিমা খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। এ খাতের শৃঙ্খলা ও আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করবে।
জানা যায়, ব্যাংক বিমা পণ্য বিক্রি করবে। এমন চর্চা প্রায় সারা বিশ্বেই চালু আছে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে জীবনবিমা পলিসি বিক্রি হয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। নিকটতম প্রতিবেশী ভারতে এটি চালু হয় প্রায় তিন যুগ আগে। পাকিস্তান, শ্রীলংকাও এতে সফল হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বিমা পণ্যের জন্য গ্রাহকদের বিমা কোম্পানিতে যেতে হবে না, ব্যাংকের শাখায় গেলেই চলবে। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংকিং পণ্যের পাশাপাশি বিমা পণ্যও বিক্রি করবে। পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেনশন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, দেনমোহর, শিক্ষা, ওমরাহ ইত্যাদি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ব্যাংকাস্যুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। সেজন্য বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে তাদের। তবে কোনো ব্যাংক একই সঙ্গে সর্বোচ্চ তিনটি জীবনবিমা ও তিনটি সাধারণ বিমার পণ্যসেবা বিক্রি করতে পারবে। এজন্য বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ চালুর ক্ষেত্রে ব্যাংকের আর্থিক সূচকের মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাইলেই আর্থিকভাবে দুর্বল কোনো ব্যাংক বিমা পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। শর্তের মধ্যে রয়েছে-বিমা ব্যবসায় যুক্ত হতে হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধনের বিপরীতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের (সিআরএআর) অনুপাত হতে হবে সাড়ে ১২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ মূলধন সংরক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪টি ব্যাংকের সিআরএআর সাড়ে ১২ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছয়টি।
এছাড়া ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ক্রেডিট রেটিংয়ে গ্রেড-২-এর নিচে থাকা ব্যাংকও বিমা ব্যবসায় যুক্ত হতে পারবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংও ন্যূনতম ২ থাকতে হবে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে বলা হয়েছে, নিট খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
অন্যদিকে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করতে আগ্রহী ব্যাংককে পরপর তিন বছর মুনাফায় থাকার শর্ত দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।
এতে বলা হয়, অনুমোদন পাওয়ার পর স্বতন্ত্র ব্যাংকাস্যুরেন্স ইউনিট বা উইং প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংক বিমাকারীর বিমাসংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করবে না বা বিমাকারী হিসাবে কাজ করবে না মর্মে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করবে।
নীতিমালার শর্তে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোনো গ্রাহককে বিমা পণ্য গ্রহণে বাধ্য করতে পারবে না। এছাড়া কোনো গ্রাহককে বিমা পণ্য ক্রয়ে উৎসাহিত করার জন্য বিমা কোম্পানি ঘোষিত মূল্য ব্যতিরেকে অন্য কোনো প্রণোদনা (অতিরিক্ত ছাড়/নগদ ফেরত অথবা কোনো প্রকার ফি বা সুদ মওকুফ) দেওয়া যাবে না।
জানা যায়, দেশে ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাশাপাশি ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। দেশে ব্যাংকের মোট শাখা প্রায় ১১ হাজার ২৮৪টি। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪টি দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।