ধর্ম ডেস্ক : প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশে ছয় ঋতু। এর মধ্যে একটি শীত। হাড়-কাঁপানো হিমেল বাতাস, কুয়াশা ও শিশিরের জন্য মনে রাখার মতো এই ঋতু। এ সময় দিন ছোট ও রাত বড় হয়।
উত্তর দিক থেকে হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন প্রকৃতি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। এ দেশে এর একটি নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। বর্ণিত সৌন্দর্যগুলো প্রাকৃতিক, কিন্তু এই শীত মুমিনের জীবনকে আরো বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে।
মুমিন এই শীতে অনেক গনিমত লাভ করে। আজকের আলোচনায় ধারাবাহিকভাবে শীতকালে মুমিনের পাঁচটি গনিমত তুলে ধরা হলো :
বেশি বেশি সিয়াম পালন করা: শীকতালে বেশি সিয়াম পালন করাকে হাদিসের ভাষায় ঠাণ্ডা গনিমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ শীতের দিনে রোজা পালন করতে তৃষ্ণার্ত হতে হয় না এবং ছোট দিন হওয়ায় ক্ষুধার তীব্রতা অনেক কম থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, শীতকালের রোজা হচ্ছে বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ মালের অনুরূপ। শীতকালীন সাওম হচ্ছে ঠাণ্ডা গনিমত অর্থাৎ কষ্টহীন পুণ্য। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৭)
কিয়ামুল লাইল: তথা তাহাজ্জুদের নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া মুমিনের শীতকালীন সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি করে। এ নামাজ মুমিনের মর্যাদা ও সফলতার সিঁড়ি। আল্লাহর একান্ত ও প্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। রাসুল (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর সর্বপ্রথম জনতাকে যে নসিহত করেছিলেন তা হচ্ছে, ‘হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৫১)
ফজরের নামাজের অফুরন্ত সুযোগ: শীতের স্নিগ্ধ সকালে মুয়াজ্জিন যখন আজানের সুরে নামাজের দিকে, কল্যাণের দিকে আহ্বান করেন তখন কেবল মুমিনরাই শীতের আরামদায়ক ঘুম ত্যাগ করে মহান রবের সামনে সিজদায় মাথা লুটিয়ে দিতে উদগ্রীব হতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এই বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, পরে ওজু করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে; অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। (বুখারি, হাদিস : ১০৯১)
প্রতিদান পাওয়ার আশায় অজু করা: হাড়-কাঁপানো শীতের মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দ্বারা অজু করে মহান রবের সান্নিধ্যে আসা কেবলমাত্র মুমিনের পক্ষেই সম্ভব। আর এই অজু সঠিক হওয়ার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) এক সফরে আমাদের পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন, অতঃপর তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে গেলেন। তখন আমরা আসরের সালাত শুরু করতে দেরি করে ফেলেছিলাম। তাই আমরা অজু করছিলাম এবং (তাড়াতাড়ির কারণে) আমাদের পা মাসেহ করার মতো হালকাভাবে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলেন, পায়ের গোড়ালিগুলোর জন্য জাহান্নামের শাস্তি আছে। দুইবার অথবা তিনবার তিনি এ কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০)
আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করার সুযোগ: শীতের পোশাক মানুষকে আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্য আছে শীতবস্ত্রের উপকরণ আছে। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।