আব্দুল হামিদ : ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার সব বিজ্ঞাপনের ফাঁদ। এসব বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই সর্বনাশ। সম্প্রতি এই চক্রের ফাঁদে পড়েন মো. ফরহাদ (আসল নাম নয়)। গভীর রাতে ফেসবুক ব্যবহারের সময় তাঁর সামনে আসে একটি খাবারের তালিকা। ক্লিক করতেই ফরহাদ তাঁর ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ হারান। পরে হ্যাকার পরিচয়ে তাঁর কাছে টাকা দাবি করতে থাকে। এখন পর্যন্ত চক্রের ফাঁদে পাঁচ শতাধিক ভুক্তভোগী লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
সময় কাটানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মধ্যেই ফাঁদ পেতে আছে একশ্রেণির প্রতারক। তারা সবার সুন্দর মুহূর্তগুলো নিমেষে ধোঁয়াশে করে ফেলছে। এ চক্রের প্রতারণার ধরন একটু ভিন্ন। এ পর্যন্ত ৫০০ ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চক্রটি। ঢাকাকেন্দ্রিক চক্রটি বেশি সক্রিয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে তারা রাতেই ফিশিং লিঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ঘটনার দিন রাতে ফেসবুকে খাবারের তালিকা দেখতে গিয়ে হ্যাকার চক্রের ফাঁদে পড়েন ভুক্তভোগী ফরহাদ। তিনি বলেন, ফেসবুক ব্যবহারের সময় সামনে খাবারের মেন্যু আসে। সেটা দেখতে ক্লিক করি। পরে আমার আইডি ও পাসওয়ার্ড চায়। খাবারের মেন্যু দেখে কোনো কিছু না ভেবেই সেটা দিই। এর একটু পরেই আইডি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ওই সময় মেসেজ করতে থাকা আমার বান্ধবীকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সেও সতর্ক হয়ে যায়। তবে রাত যেতে না যেতেই আমাদের ছবি বিভিন্নজনের কাছে পাঠাতে থাকে।
আমাকে ফোন করে হ্যাকার পরিচয় দিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। না দিলে ছবি ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেয়। তাকে টাকা পাঠানোর পর আরও টাকা চাইলে পরে বাধ্য হয় থানায় মামলা করি।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এ চক্রের প্রধান কাউছার আহম্মেদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। রাজধানীর খিলগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে করা ভুক্তভোগীর মামলায় লক্ষ্মীপুর সদর তেমুহনী এলাকা থেকে গত ৭ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এর আগেও একবার মোহাম্মদপুর থানায় করা প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল সিটিটিসি।
জানা গেছে, হ্যাকার কাউছার প্রথমে অনলাইনে ফিশিং লিঙ্কের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে সেই লিঙ্কে আইডি নাম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করামাত্রই তার কাছে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সব চলে যায়। এ সময় সে দ্রুত আইডির পাসওয়ার্ড বদলে নেয়। নিয়ন্ত্রণে নেওয়া আইডির মেসেঞ্জারে থাকা ছবি, ভিডিওসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।
সংশ্লিষ্ট আইডি থেকে কাউছার সব তথ্য সংগ্রহের পর ভুক্তভোগীকে সে জানাত, তাদের আইডি হ্যাক করা হয়েছে। টাকা না দিলে আইডি থেকে নেওয়া গোপন তথ্য, ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। তার এ হুমকিতে কেউ কেউ টাকা দিতে রাজি না হলে ভুক্তভোগীর স্পর্শকাতর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দিত। এভাবে কয়েক বছরে ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে কাউছার।
হ্যাকার বিকাশ বা নগদে টাকা নিয়ে সেই নম্বর বন্ধ করে দিতে। তার কাছ থেকে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট চালু করা অনেক সিমকার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিও তার নামে রেজিস্টেশন করা ছিল না।
সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) আফছার আহমেদ বলেন, হ্যাকার চক্রের প্রধান কাউছারের চার থেকে পাঁচজন সহযোগী আছে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে। চক্রের প্রধান উদ্দেশ্য টাকা আত্মসাৎ করা। কাউছারের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।