জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এবারের বন্যা দুই বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেটবাসীকে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে অব্যাহত রয়েছে পাহাড়ি ঢল। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
বুধবার (১৯ জুন) সকাল পর্যন্ত পানিবন্দি আছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ। সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরের অর্ধলক্ষ লোক পানিবন্দি।
জেলা ও নগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে। এ ছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ।
ইতোমধ্যে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে এসব এলাকার মানুষ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব গণমাধ্যমকে জানান, সিলেটে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৬টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েক দিন সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।