বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়! ফোটে জিনিয়া ফুল। নাসা মহাকাশে ফুল ফুটিয়ে এক অসম্ভব এবং আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব বিষয়কে বাস্তবে পরিণত করে বসে থাকেনি। তারা এর মাঝেই পরবর্তী করণীয় পদক্ষেপের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। নাসার মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এখন অন্যতম মুখ্য একটি বিষয় হলো মহাকাশে কীভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব।
মানে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো কীভাবে দীর্ঘদিন মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে অবস্থান করা নভোচারীদের জন্য সহজে হজমযোগ্য ফ্রেশ ফলমূল এবং শাকসবজি সরবরাহ করা যায়। একবার যেহেতু জিনিয়া ফুল ফোটানো সম্ভব হয়েছে, নাসার মনে হয়েছে পরবর্তী সময়ে হয়তো মহাকাশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজের পরিকল্পনাও তাহলে জোরেশোরে করে ফেলা যায়!
অনেক দিন থেকেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন যাতে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে সবুজায়ন করা যায়। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলজাতীয় উদ্ভিদ লাগিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, আদৌ সেখানে এই ধরনের উদ্ভিদ জন্মানো সম্ভব কি না।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের ইনস্টাগ্রাম পেজে মহাকাশে জিনিয়া গাছে ফুটে থাকা ফুলের ছবি প্রকাশ করে।
এমন ঘটনায় বিজ্ঞানীরা মহাকাশে সবুজায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খুঁজে পেয়েছেন নতুন আশার আলো। নাসার অফিশিয়াল পেজে এই জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ফসল উৎপাদনসংক্রান্ত গবেষণার অংশ হিসেবে একটি গাছে এই জিনিয়া ফুল পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ফুটেছে।
মহাকাশে কিংবা পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য গ্রহগুলোতে এই ফসল উৎপাদনের গবেষণা কিন্তু আজ থেকে শুরু হয়নি। সেই ১৯৭০-এর দশক থেকেই মহাকাশে কীভাবে ফসল উৎপাদন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।
২০১৯ সালে চীনের উৎক্ষেপণ করা চ্যাং ই প্রোব চাঁদের দূরবর্তী অংশে প্রেরণ করা হয়েছিল। বিস্ময়করভাবে সেখানে এই প্রোবে রাখা একটি তুলাবীজের অঙ্কুরোদগম ঘটানো সম্ভব হয়েছিল। পিপলস ডেইলি, চায়না এই ঘটনাটিকে চাঁদে মানবসভ্যতার প্রথম বায়োলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই প্রোবটিই মহাশূন্য অভিযানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চাঁদের কালো অংশে নামতে সক্ষম হয়েছিল।
২০১৫ সালের দিকে এই প্রকল্প নিয়ে জোরেশোরে কাজ শুরু হয়।
মহাকাশচারী কেউলি লিন্ডগ্রেন হলেন সেই গবেষণার প্রণেতা। তিনি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে সবজি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি সেখানে একটি জিনিয়া ফুলের বীজও লাগিয়েছিলেন। একদিন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে সেই জিনিয়া বীজ থেকেই ফুল ফুটল মহাকাশে!
এই সবুজায়ন গবেষণায় সাফল্য পেলে পরবর্তীকালে নাসা চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে পরিচালিত মিশনগুলোতে বিশুদ্ধ ও পরিশোধিত খাবারের উৎস তৈরি করতে সক্ষম হবে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের ল্যাবে টমেটো, লেটুসসহ নানা শাকসবজি জন্মানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। কে জানে, একদিন হয়তো এভাবেই পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহগুলোয় ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আমাদের এই পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অদূর ভবিষ্যতে যে তীব্র খাদ্যসংকট তৈরি হতে চলেছে, সে ক্ষেত্রে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র: নাসা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।