লাইফস্টাইল ডেস্ক : আজ পহেলা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। শেষ হলো বৈশাখ। তীব্র তাপদাহ সয়ে আম কাঁঠাল লিচুসহ নানা ফলের সমাহার নিয়ে কৃষ্ণচুড়ার আগুনে রঙ ছড়িয়ে যাত্রা শুরু হলো গ্রীষ্ম দুহিতা জ্যৈষ্ঠের।
এ মাসের মতো অন্য কোনো মাসে এক সাথে এত ফলের আধিক্য নজরে পড়ে না। আর সেজন্য অনেকেই ভুল করে জ্যৈষ্ঠকে মধুমাস হিসেবে অভিহিত করেন। আসলে জ্যৈষ্ঠ মধুমাস নয়। অভিধান বলছে, চৈত্র মাস হচ্ছে মধুমাস। যুগ যুগ ধরে এমনটিই ব্যবহৃত হয়ে আসছে সাহিত্যে। শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)-এর প্রতিষ্ঠাতা, লেখক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ ড. মোহাম্মদ আমীন বলেছেন, ‘মধুমাস শব্দের অর্থ চৈত্র মাস। অনেকে জ্যৈষ্ঠ মাস অর্থে শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। এটি অশুদ্ধ। মধুমাস কেবল চৈত্র মাসকে বোঝায়। অন্যদিকে ‘মধুফল’ বলে কোনো শব্দ বাংলা অভিধানে নেই। তবে বৃন্দাবনের একটি বনের নাম ‘মধুবন’। কিন্তু ‘মধুফল’ নামের কোনো ফল কোথাও নেই।’
অনেক পত্রপত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে কোনো কিছু লিখতে গিয়ে লেখা হয়, ‘মিষ্টি ফলের রসে ভরা মধুমাস’। এভাবেই জ্যৈষ্ঠ মাসের সঙ্গে মধুমাস বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। তারা বোঝাতে চান- জ্যৈষ্ঠ মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, ডেউয়া, লটকন, গোলাপ জাম, বেতফল, গাব, জামরুল, আতাফল, কাউ, শরীফা প্রভৃতি ফল পাওয়া যায়। ফলের এই মৌ মৌ ঘ্রাণে জ্যৈষ্ঠ মাস তাদের কাছে হয়ে উঠেছে মধুময়। ধারণা করা হয়, জ্যৈষ্ঠ মাসে আম, জাম, কাঁঠালসহ একাধিক মিষ্টি ফল পাকে বলেই প্রয়োগকারীরা ভুলবশত ধরে নিয়েছেন, মধুমাস মানেই জ্যৈষ্ঠ মাস। অথচ দৌলত উজির বাহরাম খান তার কাব্যে বলেছেন, ‘মধুমাসে উতলা বাতাস, কুহরে পিক; যদি সে কমল শিশিরে দহল কি করিব মধুমাসে।’ এখানে তিনি চৈত্র মাসের কথাই বলেছেন। কারণ জ্যৈষ্ঠ মাসে কোকিল ডাকে না।
প্রাচীন কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীও চৈত্র মাস অর্থেই মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।’ এদিকে চণ্ডীদাসও চৈত্র মাস বা বসন্তকাল অর্থে মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘মধুমাস আপায় মাধব পরশে।’ এখানে আপায় মানে ‘গত হয়’।
এছাড়া খনার বচনেও মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকেই বোঝানো হয়েছে, ‘মধুমাসে প্রথম দিনে হয় যেই বার/ রবি শোষে মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার।/ সোম শুক্র শুরু আর/ পৃথ্বী সয় না শস্যের ভার॥/ পাঁচ শনি পায় মীনে/ শকুনি মাংস না খায় ঘুণে।’
কবিতার পঙক্তি ছাড়াও অভিধান মতে, ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্তকাল। আবার মধু বলতেও এই বসন্তকালকেই বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে বসন্তের সখা কোকিলের আরেক নাম হচ্ছে ‘মধুসখ’। এছাড়া হিন্দিতে ‘বাহারী’ মানে মধুকাল বা মধুমাস।
জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু হয় আম লিচুকে ঘিরে। জ্যৈষ্ঠের বাজারে আম-কাঁঠালসহ নানা ফল আসা শুরু হয়েছে। তবে নানা জাতের আমই এ মাসে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়ে ফলপ্রিয় মানুষের। নানা জাতের গুটি আম, বনেদী জাতের গোপালভোগ, রানীপছন্দ, ক্ষিরসাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, বউ সোহাগী, বউ ভোলানা, নবাবপছন্দ, বেগম পছন্দ, হাড়িভাঙ্গা-এমন কত নামের আম যে আছে, তার ঠিক নেই।
এ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম জ্যৈষ্ঠের এগারো তারিখে। তাই জাতীয় কবির জন্মমাস হিসাবেও জ্যৈষ্ঠ পেয়েছে অন্যরকম মর্যাদা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।