বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একবিংশ শতকে যোগাযোগের গোটা ধারণাটাই বদলে যায় স্মার্টফোনের হাত ধরে। পকেটে থাকা ওই একটা মোবাইল হ্যান্ডসেটের সাহায্যে হেন কাজ নেই যা আজ মানুষ করতে পারে না। তবে স্মার্টফোন ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে পার্থক্য দেখা যায়। কেউ কাজের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, আবার অনেকে নিত্যনতুন ফিচার্স থাকা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
কিন্তু বেশিরভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে একটা বিষয়ে একই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেটা আসলে এক গুরুত্বপূর্ণ ভুল। আর তার ফলে হাজার হাজার টাকা দিয়ে কেনা স্মার্টফোন দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে। অথচ সামান্য সতর্ক থাকলেই আপনার স্মার্টফোন সহজে খারাপ হবে না।
কেন তাড়াতাড়ি খারাপ হয় স্মার্টফোন?
দেখুন, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কখন খারাপ হবে সে বিষয়ে আগাম কিছু নিশ্চিত করে বলা সত্যিই কঠিন। কিন্তু কতগুলো সহজ বিষয় সবসময় মেনে চললে সাধারণত হঠাৎ করে স্মার্টফোন খারাপ হয়ে যায় না। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ক্ষেত্রে একটা সহজ বিষয় হল, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ যাওয়ার বিষয়ে বিন্দুমাত্র অনিয়ম হলে ভেতরের সমস্ত কলকব্জা বা সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি স্মার্টফোন নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হল চার্জিং সমস্যা। ভুলভাবে নিয়ম না মেনে স্মার্টফোনে চার্জ দেওয়ার কারণেই তা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। কী কী করলে স্মার্ট ফোন দ্রুত খারাপ হয়ে যায় তা দেখুন-
(1) যেকোনও চার্জার ব্যবহার করে ফোনে চার্জ দিলে।
(2) সুইচ বোর্ড বা চার্জিং পয়েন্টে লুজ কানেকশন থাকলে।
(3) টানা চার্জ দেওয়ার বদলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন চার্জে বসালে তাড়াতাড়ি স্মার্টফোনের লিথিয়াম ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে।
(4) ভোল্টেজ অতিরিক্ত আপ-ডাউন করলে এবং সেই সময় স্মার্টফোনে চার্জ দিলে ব্যাটারির ক্ষতি হয়।
(5) স্মার্টফোনের চার্জিং সকেট কোনোভাবে জল বা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে এবং খেয়াল না করে ওই অবস্থায় চার্জে বসালে ফোনের পাওয়ার আইসি শর্ট হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে স্মার্টফোনকে ভালো রাখা সম্ভব?
একটি স্মার্টফোনের দুটি দিক থাকে। একটা হচ্ছে সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন এরিয়া অন্যটি হার্ডওয়ার সংক্রান্ত বিষয়। চার্জ দেওয়া, তরল পদার্থের সংস্পর্শে না আনা, ফোনকে সাবধানে রাখা এগুলো মূলত হার্ডওয়ার সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে পড়ে। স্মার্টফোনের হার্ডওয়ার অংশ কী করে ভালো রাখবেন, ফোনকে কীভাবে দ্রুত নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবেন তা দেখুন-
(1) চার্জিং পোর্ট বা জ্যাকের পিন ভেঙে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়া অবস্থায় কখনোই স্মার্টফোনে চার্জ দেবেন না। এক্ষেত্রে ড্যামেজের কারণে চার্জিং পোর্ট থেকে বিদ্যুৎ লিক করতে পারে, যা আপনার স্মার্টফোনের ভয়াবহ ক্ষতি করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বহু মানুষ এই ভুল করেন বলেই দ্রুত তাঁদের স্মার্টফোন নষ্ট হয়ে যায়।
(2) যে সংস্থার স্মার্টফোন সেই সংস্থার নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জন্য তৈরি চার্জার দিয়ে ফোনে চার্জ দিন। সেই চার্জার একান্তই যদি খারাপ হয়ে যায় তবে একই ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট চার্জার কিনে আবার স্মার্টফোনে চার্জ দিন। অন্য সংস্থার চার্জার বা বাজার চলতি লোকাল চার্জার কিনে কখনই ফোনে চার্জ দেবেন না। এই ভুলের কারণেই দ্রুত খারাপ হয়ে যায় স্মার্টফোন।
(3) ঘন ঘন স্মার্ট ফোন চার্জে বসাবেন না। প্রতিদিন সকালে স্মার্টফোন চার্জে বসান এবং টানা সময় চার্জ দিয়ে তা ফুল চার্জ করে খুলে নিন। সারাদিনে যদি একবার চার্জ দিলেই কাজ চলে যায় তবে সেটা সবচেয়ে ভালো। চেষ্টা করবেন ফোনের চার্জ ২০ শতাংশের নিচে নামার পর সেটি আবার চার্জে বসাতে। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় মাথায় রাখবেন, ফোনের চার্জ ২০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে সেটি ব্যবহার না করার চেষ্টা করবেন। আর ১০০ শতাংশ চার্জ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চার্জ থেকে ফোন খুলে নেবেন।
(4) ফোন চার্জে বসিয়ে রাতে ঘুমোতে যাবেন না। কারণ তাতে ফোন ওভার চার্জ হয়ে যাবে। আজকালকার স্মার্টফোনগুলিতে সাধারণত লিথিয়াম ব্যাটারি থাকে। এটি ওভার চার্জ হলে খারাপ হতে শুরু করে। তাই আপনার স্মার্টফোনকে বেশিদিন ভালো রাখতে হলে ওভার চার্জের বিপদ থেকেও তাকে রক্ষা করতে হবে।
(5) ঘুমোনোর সময় মাথার বালিশের নিচে স্মার্টফোন রাখবেন না। আপনার মাথার চাপে ফোনের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
(6) ফোনে চার্জ দেওয়ার সময় কভার বন্ধ রাখবেন না। বরং সমস্ত রকম কভার থেকে বার করে স্মার্টফোনে চার্জ দেওয়া ভালো। নাহলে ফোন গরম হয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।
যে সমস্ত বিষয়গুলি বলা হল তা মেনে চললে আপনার স্মার্টফোন অবশ্যই ভালো থাকবে। শুধু তাই নয় আপনি নিজেও রক্ষা পাবেন। কারণ ভুলভালভাবে চার্জ দেওয়ার কারণে অনেক সময় স্মার্টফোনের ব্যাটারি উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে ব্যবহারকারীর বড় বিপদ ঘটতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।