লাইফস্টাইল ডেস্ক : কোনো খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই যদি ‘খাই-খাই’ ভাব জাগে, তবে সেটা হয়ত খাদ্যাভ্যাসের কারণে হচ্ছে। কারণ কিছু খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়িয়ে দেয়।
“বিশেষ করে প্রক্রিয়াজত কার্বোহাইড্রেইট ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর এরকম হয়। কারণ এই ধরনের খাবারে পরিতৃপ্ত হওয়ার মতো প্রোটিন ও আঁশ থাকে না”- ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পুষ্টিবিদ ডেস্টিনি মুডি।
তিনি আরও বলেন, “উচ্চ মাত্রায় পরিশোধিত কার্বস, আঁশ ও প্রোটিন কম ধরনের খাবার রক্তে চিনির মাত্রায় গোলোযোগ তৈরি করে। ফলাফল হল খাওয়ার ইচ্ছে বাড়া।”
পেস্ট্রি
ছোট আকারের এই মিষ্টি খাবার দেখতেও আকর্ষণীয় লাগে।
তবে মুডি বলেন, “এই খাবারে থাকে সরল কার্বস। ফলে স্বাদে তৃপ্তি দিলেও খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।”
আর যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন এবং আঁশ না থাকায় দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে আবার কমিয়ে দেয়।
মুডি বলেন, “রক্তের শর্করার মাত্রা কমার পরপরই ক্ষুধা অনুভত হয় আর ক্লান্তি লাগে। তাই এই ধরনের মিষ্টি খাবারের সাথে সিদ্ধ ডিম বা টক দই খেতে পারলে বাজে প্রভাব কাটানো যায়।”
ক্রোস্যান্ট
এই খাবার দেখতে বড় লাগলেও আসলে ফাঁপা অংশের পরিমাণ বেশি। ফলে খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার খিদা লেগে যায়।
“সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি যে কোনো খাবারেই সরল কার্বোহাইড্রেইটস থাকে। যা কিনা দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে খরচ হয়ে যায়। যে কারণে পেস্ট্রির মতো এটাও খাওয়ার পর আবার খাওয়ার ইচ্ছে যাগে”- বলেন মুডি।
কম চর্বিযুক্ত দই
সাধারণভাবে দই স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। তবে কম ননীযুক্ত ও আলাদা করে মিষ্টি দেওয়া দই শরীরে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। আর খিদাও বাড়িয়ে দেয়।
তবে টক দই এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে থাকে প্রোটিন ও প্রাকৃতিক চিনি যাকে বলে ল্যাক্টোজ।
দই খাওয়ার ক্ষেত্রে কম পরিশোধিত ও ননিযুক্ত দই খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
অ্যালকোহল
যদিও এটা কোনো খাবার না। তবে পানীয় হিসেবে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।
মুডি ব্যাখ্যা করেন, “দেহ অ্যালকোহল হজম করতে গিয়ে গ্লুকোজ নিঃসরণ বাড়ায়, যা যকৃতের কার্যক্রম ধীর করে দেয়। এর বিপরীত প্রভাবে রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়। কোনো কোনো সময় রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গিয়ে দ্রুত কমে আসে।”
রক্তে ঘন ঘন চিনির মাত্রা ওঠা নামার কারণে মুখরোচক খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগতে থাকে। আর এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয় যদি অ্যালকোহল কোনো মিষ্টি পানীয়র সাথে মিশিয়ে খাওয়অ হয়- যেমন চিনিযুক্ত কোমল পানীয়।
এছাড়া অ্যালকোহলে থাকা কার্বোহাইড্রেইটস ক্ষুধার মাত্রা বাড়ায়।
আলুর চিপস
হাত ভর্তি করে চিপস খেতে বেশ লাগে। তবে সব আলুর চিপসেই থাকে লবণ, যা খাবার ইচ্ছে বাড়িয়ে দেয়।
মুডি বলেন, “প্রায় সব খাবারের স্বাদের জন্য লবণ প্রয়োজন হয়। আর লবণ লালাগ্রন্থির কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। আর মুখে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ মানে আরও মজার স্বাদের খাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়।”
এছাড়া পরিতৃপ্ত থাকার হরমোন ডোপামিন নিঃসরণ করতে সহায়তা করে লবণ।
তাই তৃপ্তি পেতে আলুর চিপস খাওয়ার পরও আরও খেতে ইচ্ছে হতে থাকে। সেই সাথে পরিশোধিত কার্বস ও প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকায় হজমও হয়ে যায় দ্রুত। ফলে দ্রুতই খিদা লেগে যায়- ব্যাখ্যা করেন মুডি।
সাদা রুটি ও ভাত
সাদা ভাত খারাপ না। তবে বাদামি চালের ভাত বরং বেশি উপকারী।
বাদামি চাল প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয় সাদা চাল। চালের ওপর থাকা বাদামি অংশ ‘ব্র্যান’ বা তুষ পরিশোধনের সময় পলিশ করে উঠিয়ে চকচকে সাদা চাল প্রস্তুত করা হয়। যে কারণে সাদা চাল খেতেও নরম লাগে।
মুডি বলেন, “চালের বাদামি অংশেই থাকে আঁশ ও ভিটামিন বি। আর এই ভিটামিন থিয়ামিন হিসেবে পরিচিত। যেটার অভাবে নানান রোগ দেখা দিতে পারে।”
আর বাদামি চালে থাকা আঁশও গুরুত্বপূর্ণ। যা সাদা চালে থাকে না। কারণ আঁশ ছাড়া সাদা চাল খাওয়ার কারণে ইন্সুলিনের দ্রুত নিঃসরণে হজমও হয় দ্রুত। আর তাড়াতাড়ি পেট খালি হওয়ার কারণে দ্রুত ক্ষুধার্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
একইভাবে সাদা রুটিও তাই। কারণ যে সাধা শষ্য থেকে আটা বা ময়দা প্রস্তুত করা হচ্ছে রুটি বা পাউরুটি তৈরির জন্য সেখানেও থাকছে না আঁশ।
যে কারণে সাদা রুটি দিয়ে তৈরি স্যান্ডউইচ খাওয়ার পরও খিদা লাগে। তাই খেতেই যদি হয় তবে চর্বিহীন মাংসের সঙ্গে সাদার রুটি দিয়ে তৈরি স্যান্ডউইচ খাওয়ার পরামর্শ দেন, মার্কিন পুষ্টিবিদ।
সাদা পাস্তা
কার্বোহাইড্রেইটস’য়ের উৎস হিসেবে বাজারে সাদা ও বাদামি- দুই ধরনের পাস্তা পাওয়া যায়। তবে খেতে বেশি মজা লাগে সাদা পাস্তা।
সাদা পাস্তা তৈরি হয় পরিশোধিত ময়দা থেকে। মানে হল সেটা থাকে কম আঁশ, ভিটামিন আর খনিজ।
“কম আঁশযুক্ত পাস্তা খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই খাওয়ার পরও আরও খেতে ইচ্ছে করে”- ব্যাখ্যা করেন মুডি।
অন্যদিকে পরিশোধন করা ‘হোল-হুইট পাস্তা’ ধীরে হজম হয়, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
জুস
ফল খাওয়া উপকারী। তবে সেটা থেকে তৈরি শুধু জুস বা রসে থাকেনা ফলের আঁশ। বরং ফলের শর্করা থেকে যায়। যে কারণে রক্তে দ্রুত ফলের রসের শর্করা মিশে গিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ যেমন বাড়ায়, আবার দ্রুত কমিয়েও দেয়।
শর্করার এই দ্রুত ওঠা-নামার কারণে পেটের পরিতৃপ্ততা দ্রুত হারায়। তাই ফলের রস বা জুসের চাইতে আস্ত ফল খাওয়া উপকারী আর পেট ভরা অনুভূতিও দেয় অনেকক্ষণ।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ
আলু দীর্ঘক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দিতে পারে। তবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ আকারে নয়।
কারণ এতে থাকে পরিশোধিত কার্বস ও লবণ বা সোডিয়াম। যা স্বাদের তৃপ্তি দিলেও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে না- ব্যাখ্যা করেন মুডি।
তিনি বলেন, “প্রোটিন ও আঁশ থাকে না আলু ভাজায়ে। যে কারণে খাওয়ার পরও তৃপ্তি আসে না। তখন আরও খেতে ইচ্ছে হয়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।