মনিকা রানী সরকার : বাড়ছে গরম। মাসের শুরু থেকে বয়ে চলছে তাপপ্রবাহ। এতে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন। বর্তমানে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকছে বাতাসের আর্দ্রতা। এতে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সময় শিশুদের পুষ্টি ঠিক রাখার জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
তাপপ্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া শিশুর শরীর থেকে প্রচুর ঘামও বের হয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা, হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া, জ্বর ও হিট স্ট্রোক সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
গরমে শিশুর খাদ্য হতে হবে সহজপাচ্য, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা খুবই জরুরি। তীব্র গরমে শিশুর খাদ্য নির্বাচনে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে সেগুলো হলো–
১. গরমে শিশুর খাদ্য তালিকায় তরলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শিশুকে ফলের রস, শরবত, মিল্ক সেক, ডাবের পানি, লেবু, মধু মিশ্রিত পানি ইত্যাদি দিতে হবে। তবে দোকানের বা প্যাকেটজাত জুস বা ফলের রস না দেওয়াই ভালো।
২. আপনার শিশু গরমে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পানি পান করছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। শিশুদের বয়সভেদে দৈনিক দেড় থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে।
৩. এই গরমের মৌসুমে আপনার শিশুকে পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার দিন। সতেজ ও কম মশলাযুক্ত খাবার এ সময় শিশুর জন্য ভালো। সেক্ষেত্রে পাতলা নরম সবজি খিচুড়ি, সবজি, মাংসের স্যুপ শিশুর জন্য উপযুক্ত খাবার হতে পারে।
৪. শাক–সবজি বিশেষ করে লাউ, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়শ, করলা, শসা, টমেটো ইত্যাদির পরিমাণ শিশুর খাবারের তালিকায় রাখুন। শিশুদের খাদ্য তালিকায় সালাদও রাখতে পারেন।
৫. গরমে শিশুর খাদ্য তালিকায় দৈনিক এক থেকে দুইবার অবশ্যই মৌসুমি রসালো ফল রাখতে হবে। গরমে তরলের চাহিদা ও ভিটামিন, মিনারেলস এর দৈনিক চাহিদা পূরণে ফল অতুলনীয়। এ ছাড়া ফলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। আপনার শিশুকে গরমে আম, তরমুজ ও বাঙ্গি খাওয়াতে পারেন। এ ছাড়া পেঁপে, কলা, স্ট্রবেরি শিশুকে দিতে পারেন।
৬. ডিম শিশুর জন্য আদর্শ খাদ্য। ডিম নিয়ে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, অতিরিক্ত গরমে শিশুকে ডিম দেওয়া যাবে না– যা সম্পূর্ণ অমূলক। গরমে শিশুকে ডিম পোঁচ, সেদ্ধ বা দুধের সঙ্গে মিশ্রিত করে পুডিং তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। ডিম শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশুর জন্য প্রতিদিন ডিম গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়।
৭. দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পুষ্টিগুণে ভরপুর দই প্রোটিন, ফ্যাট, শর্করা, খনিজ এবং ভিটামিনের সঠিক সংমিশ্রণ সরবরাহ করে। এ ছাড়া দই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরমে শিশুদের খাদ্য তালিকায় দই রাখলে শিশুর সুস্থ থাকা সহজ হয়।
৮. তীব্র গরমে শিশুদের স্কুলের টিফিনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুরা বাইরের খাবার যেন না খায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। শিশুকে ঘরের তৈরি টিফিন দিন। ফাস্টফুডকে বাদ দিয়ে সেদ্ধ বা অল্প তেলে রান্না করা টিফিন দিতে পারেন।
৯. শিশুর জন্য বাসায় তৈরি ফ্রুটকেক, স্যান্ডউইচ, চিকেন মোমো, সবজি চিকেন, কাটলেট ইত্যাদি আমরা টিফিন হিসেবে দিতে পারি। টিফিনে অবশ্যই একটি রসালো ফল দেওয়া উচিত। এর সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বা ফলের জুস বা খাবার স্যালাইন দিতে পারেন।
সুস্থ শিশুর ভবিষ্যৎ হবে সুন্দর। সামান্য কিছু খাদ্যাভাস মেনে চললেই এই তীব্র গরমে আপনার শিশু থাকবে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি নিউট্রিশন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেল্থ সায়েন্স
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।