আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সারোগেসি বা বিকল্প মাতৃত্বের মাধ্যমে সন্তান নিতে দম্পতিদের বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইতালি।
গত বুধবার ইতালির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়। বিলের পক্ষে পড়ে ৮৪ ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ৫৮ টি। এর আগে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গতবছরই বিলটি পাস হয়েছিল।
ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে খুবই রক্ষণশীল সামাজিক কর্মসূচি নিয়েছেন। প্রচলিত পারিবারিক মূল্যবোধ অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। এতে এলজিবিটি দম্পতিদের বৈধ পন্থায় সন্তান নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইতালিতে দেশের ভেতরে সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে ২০০৪ সাল থেকেই। তার ওপর এখন নতুন আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো যেসব দেশে সারোগেসি বৈধ সেখানে গিয়ে কারও এ পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়া বেআইনি বলে গণ্য হবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
ইতালির কট্টর-ডানপন্থি ক্ষমতাসীন দল এই আইন প্রস্তাব করেছিল। সমালোচকরা বলছেন, আইনটির লক্ষ্য মূলত এলজিবিটি (নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী) দম্পতিরা, যাদের এমনকি দেশের ভেতরেও আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়া কিংবা সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি নেই।
সারোগেসি বা বিকল্প মাতৃত্ব পদ্ধতিতে একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণ করানো হয়। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ থেকে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ থেকে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। সাধারণত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এ পদ্ধাতিতে সন্তান নিয়ে থাকেন দম্পতিরা।
ইতালির সিনেটে সারোগেসির বিরুদ্ধে আইন পাসের জন্য ভোটাভুটির আগে দিয়ে বিরোধীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা বলছে, দেশে জন্মহার কমে যেতে থাকার পরও এমন আইনের ফলে মানুষের সন্তান নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিক্ষোভে উপস্থিত এলজিবিটি অধিকারকর্মী ফ্রাঙ্কো গ্রিলিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আপনি যদি স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান জন্ম দিতে না পারেন তাহলে আপনাকে জেলে পাঠানো হবে। এটি খুবই জঘন্য আইন। পৃথিবীর কোনও দেশে এমন আইন নেই।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী ও ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টির নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি নিজেকে একজন খ্রিস্টান মা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সন্তানদের কেবল একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মাধ্যমেই জন্ম দেওয়া উচিত।
মেলোনি এর আগেও এলজিবিটি দম্পতিদের সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এমনকি এলজিবিটি বিরোধী বক্তব্যই তার নির্বাচনী প্রচারের মূল বিষয় ছিল।
২০২৩ সালে তার সরকার মিলানের সিটি কাউন্সিলকে সমকামী বাবা-মায়ের সন্তানদের নিবন্ধন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
মেলোনি সারোগেসিকে আকাঙ্খা এবং অধিকারের মধ্যে তালগোল পাকানো এক জঘন্য সমাজের প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং ঈশ্বরের নিয়মকে টাকা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।”
তার ডেপুটি মাত্তেও সালভিনিও সারোগেসি পদ্ধতিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, এতে নারীদের ‘এটিএম’-এর মতো ব্যবহার করা হয়।
ক্যারোলিনা ভার্চি নামের এক এমপি বলেন, নতুন আইন “নারীদের মর্যাদা রক্ষা করবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সারোগেসি নিয়ে বিভিন্ন আইন রয়েছে। কোথাও এটি সম্পূর্ণ বৈধ। কোথাও আবার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইউরোপীয় দেশগুলোতে সব ধরনের সারোগেসি নিষিদ্ধ। আবার যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা সমকামী দম্পতিদেরকে সারোগেসির অনুমতি দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।