বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন এক বনাঞ্চল খুঁজে পেয়েছেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচলিত নিয়ম মেনে চলে না।
এ বিস্ময়কর নজির মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বনে, যা নিয়ে গবেষণা করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট (ইউভিএম)’-এর গবেষকরা। তাদের দাবি, এমন এলাকা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’-এ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন অনুসন্ধানে ইঙ্গিত মিলেছে, কিছু পাহাড়ী বনে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ নামের এক ঘটনার জন্য সেইসব এলাকার অনেক ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়, যা নিচের দিকেও ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরি করে, যা সাধারণ ঘটনার একেবারে বিপরীত।
এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রার ধরন, যেখানে কেউ নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে শীতল অনুভূতি পান, একে ‘ভেজিটেশন ইনভার্শন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা।
সাধারণত, যেসব উদ্ভিদ প্রজাতি ঠাণ্ডা পছন্দ করে, যেমন– স্প্রুস ও দেবদারু গাছ, এদের উচ্চতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে, এই বিস্ময়কর বনগুলোয় এ ধরনের বিভিন্ন গাছ টিকে থাকে, যেখানকার পাহাড়গুলোর তাপমাত্রা অপ্রত্যাশিতভাবেই শীতল।
“মৌলিকভাবে বনটির গঠনপ্রক্রিয়ার পেছনে ছিল ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ নামের ঘটনাটি,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট (ইউভিএম)’ এর অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক ক্যারল অ্যাডায়ার।
অনুসন্ধানটি বন ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে এমন অঞ্চলের কথা ফুটে উঠেছে, যেখানে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো বাধা থাকার পরও বিভিন্ন শীতবান্ধব উদ্ভিদ প্রজাতি বেঁচে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা নোরিজ।
এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইংল্যান্ডের তিনটি বনভূমির ওপর নজর দেন গবেষকরা, যেখানে দুই বছর ধরে গাছের ধরনের পাশাপাশি এর তাপমাত্রাও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষণা দলটি দেখেছে, এইসব বনে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ শুধু একটি বিরল বা শুধু রাতের ঘটনাই নয়, বরং দিনের বেলা ও প্রায় সারা বছর ধরেই ঘটে। বিশেষভাবে এমন এলাকায়, যেখানকার উচ্চতায় খুব কমই পরিবর্তন এসেছে।
এইসব ঠাণ্ডা জায়গা শীতবান্ধব বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট (ইউভিএম)’-এর সাবেক গবেষক মেলিসা পাস্তোর বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির স্থানান্তর বা সেগুলো খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ‘মাইলফলক’ হিসেবে কাজ করবে অঞ্চলগুলো।
এটা শুধু বন সংরক্ষণ নয়, বরং কার্বন ও মাটিতে আর্দ্রতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বলে উঠে এসেছে গবেষণায়, বিশেষ করে চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে।
“এর মধ্যে রয়েছে কার্বন সংরক্ষণ ও ছোট পরিসরের বিনোদনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও” যোগ করেন অ্যাডেয়ার, যেখানে এ ধরনের ইকোসিস্টেমের ব্যবহারিক সুবিধার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘কোল্ড-এয়ার পুলিং’ কিছুটা সুরক্ষা প্রদানের সম্ভাবনা দেখালেও তা এর চূড়ান্ত সমাধান নয়।
“এই বনগুলোও গরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে,” বলে সতর্ক করেছেন পাস্তোর। “তবে তা ধীরে ধীরে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, অন্যথায় যেসব প্রজাতি উষ্ণ জলবায়ুতে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, সেগুলো এমন এলাকায় বেশি সময় টিকে থাকবে।”
গবেষণাটি পরিবেশ বিজ্ঞানের জন্য একটি বিরল সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, এ ধরনের বন বিভিন্ন শীতবান্ধব গাছকে প্রয়োজনীয় কাঠামো দেওয়ার পাশাপাশি এদেরকে ক্রমাগত গরম হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।