জুমবাংলা ডেস্ক : শরীয়তপুরের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হকের পরিবার। ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের জমি-জমা দখল করেন। পারিবারিক সম্মান বাড়াতে এক ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান, আরেক ভাইকে ইউপি চেয়ারম্যান বানান তিনি। আওয়ামী লীগের টিকিটে শরীয়তপুর-১ ও ২ আসনে এমপি হওয়ার জন্য শহিদুল হক নিজেও দৌড়ঝাঁপ কম করেননি। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় প্রভাবশালী সাবেক এই আইজিপিকে। এরপর থেকেই তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
জানা যায়, খাদ্যগুদামের সামান্য দারোয়ান আবদুল মজিদ বেপারীর ছেলে শহিদুল হক ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পর থেকেই ফুলে ফেঁপে ওঠেন তার ভাই-ভাতিজারা। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ নম্বর ভাই ইসমাইল হককে ইউপি চেয়ারম্যান ও পরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন শহিদুল হক। তৃতীয় নম্বর ভাই নুরুল হককে একই ইউনিয়নে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় বাস মালিক সমিতির নেতা হয়ে শত শত টাকার মালিক হন ইসমাইল। এছাড়াও জোর করে হন দি শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট। ভাইয়ের প্রভাবে ইসমাইল নিজের জামাইকে পুলিশের এসআই পদে চাকরি দেন। শরীয়তপুরে পেট্রল পাম্প, শরীয়তপুর ও ঢাকায় রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাও রয়েছে তাদের।
ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের জমি-জমা দখল করেন। পারিবারিক সম্মান বাড়াতে এক ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান, আরেক ভাইকে ইউপি চেয়ারম্যান বানান তিনি।
শহিদুল হকের বাবা-মায়ের নামে করা মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে শত কোটি টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কাউকে নামমাত্র টাকা দেওয়া হলেও অনেকের জমির টাকা দেননি তারা। জমি রেজিস্ট্রি ছাড়াই ইমারত নির্মাণ করার অভিযোগ রয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের ট্রাস্ট্রি সবাই একই পরিবারের সদস্য। শহিদুল হকের ভাই-ভাতিজাদের নির্যাতনে শরীয়তপুরের মানুষ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত।
অভিযোগ রয়েছে, তারা অনেকের জমি দখল করে মাছের খামার করেছেন। স্কুল ও হাসপাতাল করার নামে তারা বহু মানুষের জমি দখল করেন। নড়িয়া-শরীয়তপুরের বহু সম্মানী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের পুলিশি হয়রানি এবং মারধরের অভিযোগও রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই শহিদুল হকের দুই ছেলে, ভাই ইসমাইল হক ও তার স্ত্রী-সন্তান এবং নুরুল হক বেপারীরা ছেলেরা বিদেশে পালিয়ে যান। এছাড়াও শহিদুল হককে গ্রেফতারের পর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আল হোসাইনও পলাতক রয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে নুরুল হক বেপারীকে দেখা যায়।
এমন অবস্থায় শহিদুল হকসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন- আফাজদ্দিন খান, মরহুম নজরুল ইসলাম সাকিদার, লালন, লিটন কাজী, বাবুল শেক, নুরুল হক শেখ, মান্নান শেখ, রিপন সিকদার প্রমুখ।
শহিদুল হকের বাবা-মায়ের নামে করা মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে শত কোটি টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কাউকে নামমাত্র টাকা দেওয়া হলেও অনেকের জমির টাকা দেননি তারা। জমি রেজিস্ট্রি ছাড়াই ইমারত নির্মাণ করার অভিযোগ রয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের ট্রাস্ট্রি সবাই একই পরিবারের সদস্য। শহিদুল হকের ভাই-ভাতিজাদের নির্যাতনে শরীয়তপুরের মানুষ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহিদুল হক শরীয়তপুর স্টেডিয়ামের পাশে বাড়ি কেনেন। পদ্মাসেতুর কাছে নাওডোবা এলাকায় ইটভাটা করার জন্য ভাতিজা ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে ৪ বিঘা জমি কিনেছেন, ঢাকা ধানমন্ডি এলাকায় ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। নাওডোবা গোলচক্কর থেকে কুতুবপুর যেতে সড়কের পাশে ৩ বিঘা জমি কিনেছেন তারা।
এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় গোপনে ও প্রকাশ্যে অনেক জমিজমা কিনেছেন শহিদুল হক। তিনি এখন দেশ-বিদেশে গাড়ি-বাড়িসহ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এলাকায় মাছের ঘের করতে গিয়ে অন্যের জমি জোর করে নিয়ে তাদের পাওনা পরিশোধ করেননি বলেও অভিযোগ তার ভাতিজা ইমরান বেপারী, ভাই নুরুল হক বেপারীর ও তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি চান্দনী এলাকার নুরুল হক শেখের বাড়ি দখল করে তাদের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যান সাবেক এই আইজিপির ভাতিজা ইমরান। তাদের তখন পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর ভুক্তভোগীরা বাড়ি ফেরেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নুরুল হক শেখ বলেন, বাপ-দাদার জমিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি করে বসবাস করছি। আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকের প্রভাবে তার ভাই নুরুল হক বেপারী, ইসমাইল হক বেপারী, ভাতিজা ইমরান বেপারী আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মালামাল, টাকা-পয়সা ও গহনা লুটপাট করে নিয়ে যায়। হাসিনা সরকার পতনের পর আমরা বাড়িতে আসি। আমরা শহিদুল হকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
শহিদুল হক শরীয়তপুর স্টেডিয়ামের পাশে বাড়ি কেনেন। পদ্মাসেতুর কাছে নাওডোবা এলাকায় ইটভাটা করার জন্য ভাতিজা ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে ৪ বিঘা জমি কিনেছেন, ঢাকা ধানমন্ডি এলাকায় ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। নাওডোবা গোলচক্কর থেকে কুতুবপুর যেতে সড়কের পাশে ৩ বিঘা জমি কিনেছেন তারা।
আরেক ভুক্তভোগী নাজমুল হক বাদল বলেন, প্রভাব খাটিয়ে শহিদুল হক আমাদের জমি দখল করেছেন। আমার ভাগ্নে লিটন কাজীর জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতদিন ভয়ে মুখ খুলিনি। শহিদুল হক ও তার ভাইদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নড়িয়া ও শরীয়তপুরের অনেকেই বলেন, শহিদুল হকের আগেও শরীয়তপুরে আরেকজন আইজিপি ছিলেন। তারা ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু শহিদুল হক ক্ষমতার দাপটে মানুষের বাড়িঘর দখল করেছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। আমরা এর বিচার চাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।