জুমবাংলা ডেস্ক : পার্বত্য খাগড়াছড়ির পাহাড়ের উঁচু-নিচু জমিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে সোনালি রঙের ধান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এ যেন সবুজের বুকজুড়ে সোনালি ধানের হাসি। জুমের সোনালি পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়ের পর পাহাড়। অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এবার খাগড়াছড়ির জুমে ভালো ফলন হয়েছে। জুমে জুমে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হয়েছে জুমে।
খাগড়াছড়ির গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি ও রামগড় উপজেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস জুম চাষ। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু ফসল তারা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে থাকেন।
জুমিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুম লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রথমেই পাহাড়ে আগুন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়। তারপর জমি খনন করে বীজ বপন করা হয়। বীজ লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষ হয় অক্টোবর মাসে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জুমিয়ারা জানান, পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় এখন পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন হয়েছে। সবুজ পাহাড়ের ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পায় জুমিয়ারা।
এদিকে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। ঘরে ঘরে চলছে জুম কাটার উৎসব। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে ব্যস্ত। ফসল ঘরে তুলতে সকাল-দুপুর ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে জুমে জুমে ধান কাটছে জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষে জুমঘরে তা মাড়াই করছে। তবে খরচের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি দাবি জুমিয়াদের। জুম চাষে সার-বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা দাবি করেছেন পাহাড়ের জুমিয়ারা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার আলুটিলা এলাকার জুমচাষি শ্যামল মিত্র চাকমা বলেন, আমরা জুমের ওপর নির্ভরশীল। ধান ছাড়া হলুদ ,মারফা, ভুট্টাসহ নানা ধরনে সবজির আবাদ করেছি। ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছি। গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফলনও হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে জুমচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। তবে ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। খাগড়াছড়িতে জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ৫ হাজার কৃষক।
জুমে উৎপাদন বাড়াতে সনাতনী জুমের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করার ওপর জোর দিয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীরা। জুমের ফলন বাড়াতে গবেষণা করছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্র। আধুনিক পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জুম চাষ করলে জুমে উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে মাটিতে রক্ষণশীল পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হবে। অতিরিক্ত খাড়া পাহাড়ে চাষ করা যাবে না। যেসব ফসল চাষে অতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয় তা চাষ করা যাবে না। মাটির ক্ষয়রোধ করা গেলে উর্বরতা বাড়বে এবং জুমের ফলনও বাড়বে।
ডাবিং করতে করতে কন্যাকে দুগ্ধপান, তুমুল ভাইরাল অভিনেত্রীর ছবি
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এবার জেলায় বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমচাষিরাও সরকারি প্রণোদনার আওতায় এসেছে। তিনি জুমের উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক জাতের বীজ বপনের পরামর্শ দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।