আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুসারে, গত দেড় বছরে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। এই সংখ্যা তার আগের তিন বছরে মোট মসজিদ বন্ধের তুলনায় অনেক বেশি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। উপরের ছবিতে এক ব্যক্তিকে তার কম্পিউটারে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মসজিদ দেখাতে দেখা যাচ্ছে।
ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ রয়েছে।
এর মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মতাদর্শ প্রচার সন্দেহে ৯০টি মসজিদে তদন্ত চালানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন এমন দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স অন্যতম। কিন্তু সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, দেশটি ক্রমে মুসলমানদের জন্য বৈরী হয়ে উঠছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুসারে, ২০২১ সালে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়েছে। আর অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কমেছে।
ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমের আলন শহরের একটি মসজিদ গত অক্টোবরে বন্ধ করে দেয়া হয়। মসজিদের দরজায় বন্ধের নোটিশও দেওয়া আছে। ‘ইসলামের মৌলবাদী রূপ’ প্রচার ও ‘ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণার অনুভব চাষ’ করার অভিযোগ এনে মসজিদটি বন্ধ করা হয়। কিন্তু মসজিদের কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার তার অভিযোগের সমর্থনে খুব কম প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
মসজিদ বন্ধ করার প্রমাণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ পাতার একটি নথি (যেটি ‘হোয়াইট মেমো’ নামে পরিচিত) আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেটি রয়টার্স বিশ্লেষণ করে বলছে, নথিটি কবে তৈরি হয়েছে, কে করেছে এবং তথ্য কোথা থেকে পাওয়া গেছে তার কোনো উল্লেখ নেই।
হোয়াইট মেমোতে আলন মসজিদের চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২১ সালের এপ্রিলে সংঘটিত দুটি সন্ত্রাসী হামলায় সমর্থন প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়।
তাদের একজন করিম দাউদ স্থানীয় সরকারি অফিসে কাজ করেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তাকে সরকারি কর্মচারী হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতির পদক দেয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি গির্জায় গিয়ে সংহতিও প্রকাশ করেছিলেন।
হোয়াইট মেমোতে মসজিদ থেকে পাঁচটি বই উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। এগুলোকে ‘মৌলবাদী’ বই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ এর মধ্যে চারটি বই বিশেষায়িত বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে অনেক পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন লিল ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষক দাউদ রিফি। অন্য বইয়ের নাম ‘রিয়াদ আস-সালিহিন’। ১৩ শতকের এই বইটি ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে রাখা আছে।
হোয়াইট মেমোতে আরো অভিযোগ করা হয়, আলন মসজিদের ধর্মপ্রচারকরা সশস্ত্র জিহাদের প্রশংসা করেছেন ও মুসল্লিরা সহিংসতার ডাক দিচ্ছেন বলে শোনা গেছে (যদিও কারা শুনেছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি)।
এ ব্যাপারে করিম দাউদ বলছেন, সরকার ‘জিহাদ’ শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করেছে। জিহাদের অর্থ সশস্ত্র সংঘাত হতে পারে। আবার ‘জিহাদ আল-আকবর’ বোঝাতে প্রায়ই এটি ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ, নফস বা নিজ আত্মা পরিশুদ্ধ করার সংগ্রাম।
অধিকার কর্মী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিযোগ, ফ্রান্সে ধর্মীয় স্থান বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে এত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, যথাযথ পরীক্ষা না করেই মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় ও পর্যাপ্ত প্রমাণ না দেয়ায় মামলা পরিচালনা করা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।
এলিসি প্রাসাদ রয়টার্সের এই বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সরকার কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং ‘আইনের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে’ তা করা হয়েছে।
যে আইনে মসজিদ বন্ধ করা হয় তাতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য মসজিদ বন্ধ করতে পারে। তবে অধিকার কর্মী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, অনেক মসজিদই আর কখনো খোলা হয় না। বন্ধ হওয়া ২২টি মসজিদের মধ্যে কতটি আবার খুলেছে সে হিসেব মন্ত্রণালয় জানায়নি।
সূত্র: ডয়চেভেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।