জুমবাংলা ডেস্ক : দেশীয় ও একটি আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট মোটা টাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাল পাসপোর্ট ও ভিসা বিক্রি করছে। এতে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন পেশার লোকজন। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে প্রচারণার মাধ্যমে পাসপোর্ট ইস্যুর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমন একটি চক্রকে ধরছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। সূত্র জানায়, গত বছরের ২রা জুলাই নেপালে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ আসিফ নামে এক যুবক। তাকে দেখে বোঝার কোনো উপাই নেই যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বা কারও ফাঁদে পা দিয়েছেন। তবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় অন্যখানে। তার কাছে একটি বাংলাদেশি ও একটি আমেরিকান পাসপোর্ট ছিল। আমেরিকার পাসপোর্টে আবার একটি জাল ভিসা লাগানো ছিল। আসিফ নামের অন্য একজনের এনআইডিতে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ঠিকানা ও ছবির মিল পেলেও আসিফের পাসপোর্টে থাকা ছবির সঙ্গে কোনো মিল পাচ্ছিলেন না। ওই পাসপোর্টে তিনি নিজের ছবি লাগিয়েছেন।
পরে তাকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষসহ একাধিক সংস্থার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। আসিফ স্বীকার করেন যে, তিনি তুর্কি এক নাগরিকের কাছ থেকে ওই আমেরিকার পাসপোর্টটি পেয়েছেন। বিনিময়ে দিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। আমেরিকার পাসপোর্ট দেখিয়ে নেপাল হয়ে অন্য দেশে তিনি ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মাসুম নামে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) এডিসি মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ‘ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় গত বছরের ৫ই জুলাই মামলা হয়। তার কাছে উদ্ধার হওয়া পাসপোর্টটি সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হলে তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, এটি জাল পাসপোর্ট এবং ভিসাও জাল। তিনি আরও জানান, তুরস্ক ও সিরিয়ায় এমন একটি আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সির যোগাযোগ রয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি’র এক কর্মকর্তা জানান, আসিফের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্টটি সঠিক ছিল। কিন্তু, তার সঙ্গে থাকা আমেরিকান পাসপোর্টটি ভুয়া। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ পুলিশকে জানান, এসএসসি পাস করার পর তিনি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। আমেরিকান পাসপোর্ট এবং ভিসা পাওয়া যায় এমন একটি লেখা ফেসবুকে দেখতে পান।
সেখানে একটি নম্বর দেখতে পান তিনি। নম্বরের পাশে আবার কয়েকটি লিংকও দেখতে পান তিনি। পরে ওই নম্বরে ফোন দিলে ইমরান নামে একজন কল রিসিভ করেন। ইমরান নিজেকে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া একজন তুর্কি স্থায়ী নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। সূত্র জানায়, আসিফ তখন ইমরানের কাছে জানতে চান যে, কীভাবে আমেরিকার পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। ইমরান জানায়, ৩ লাখ টাকা দিলে তার কাছে আমেরিকার একটি পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ই জুন এবং ১৯শে জুন ইমরানের ব্যাংক হিসাবে একবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আরেকবার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠান তিনি। ২৬শে জুন একটি কুরিয়ারের মাধ্যমে তিনি ওই ভুয়া আমেরিকার পাসপোর্টটি পান। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি নেপাল যেতে চেয়েছিলেন। পরে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে যে, সিরিয়ার দুই নাগরিক মোহাম্মদ সোলেমাইন ও তাজ আলাউদ্দিন এবং তুরস্কের এক বড় সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও এর সঙ্গে পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আলীরও যোগসাজশ রয়েছে।
সূত্র জানায়, মাসুম নামে যে ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মূলত ইমরানের সঙ্গে যোগাসাজশ ছিল। মাসুম ২০১৭ সালে একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মী ছিলেন। পরে এজেন্সিটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়েন। বিদেশি নাগরিকদের টার্গেটকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে মাসুম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতো। বিনিময়ে মাসুম প্রত্যেকটি কাজের জন্য পেতেন ৩০০ ডলার। সূত্র জানায়, দুই সিরিয়ান নাগরিক, এক পাকিস্তানি ও ইমরানের তথ্য পাওয়ার জন্য সিটিটিসি’র পক্ষ থেকে ইন্টারপোলে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইন্টারপোল ফিরতি মেসেজ দিয়ে তাদের অবস্থান চিহ্নিতকরণের জন্য তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়াও ইমরানের বিস্তারিত পরিচয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তুর্কি নাগরিক ইমরানের বিস্তারিত ঠিকানা এখনো জানা যায়নি।
শাস্তি পাওয়া কোম্পানি আবারও আলোচনায়, শঙ্কায় সিংগাপুরের শ্রমবাজার!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।