জাহিদুর রহমান, সাভার : বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে সুবিধা বঞ্চিত পরিবার থেকে আসা এক শিশুর সপ্রতিভ উত্তর, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার। হাত উঁচিয়ে অন্যজন বলছে, স্যার আমি ইসলামিক স্কলার।’
আর তুমি? ‘আমি হতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।’
অথচ কদিন আগেও যাদের জীবন ছিল ধূসর বিবর্ণ আর ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাদের এসব লক্ষ্যের পথ ধরে জীবনের পথে হেঁটে চলা দূরের কথা, খোদ পরিবারের কারো ভাবনাতেও আসেনি, সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ কি হবে- তা নিয়ে।
ফেরদৌস, আহাদ, শামীম, খালেদদের মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তাই দিনটি ছিলো অন্য রকম।
আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ার প্রত্যয় আর সংকল্পকে আরো সুদৃঢ় করতে তারা এ দিনটিতে নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর।
গভীর মমতা স্নেহের পরশে প্রতিটি শিশুর সাথে কুশল করলেন প্রতিমন্ত্রী। জিজ্ঞেস করলেন তাদের বাড়ির কথা। ভবিষ্যতে তারা কি কি হতে চায় সেটাও আদরে আদরে জেনে নিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত প্রতিমন্ত্রী নিজেও নিঃসন্তান। স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনার দি হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ। পরিচালনা করেন প্রতিবন্ধীদের স্কুল।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারছেন- সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করে সেটা নিয়েও সগর্বে নিজের আনন্দ এবং স্বস্তির কথা বলতেও ভোলেননি প্রতিমন্ত্রী।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, আশ্রয় এবং অভিভাবকহীন শিশুরা বিনা খরচে পড়বে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি দেশের কল্যাণে নিবেদনের জন্য তাদের গড়ে তোলা হবে আদর্শ মানুষ হিসেবে- এমন প্রত্যয়ে চারহাজার সুবিধা বঞ্চিত শিশুর জীবন বদলে দেবার প্রত্যয়ে সাভারের আশুলিয়ার ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে গড়ে উঠেছে ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেস (ডিআইএসএস) ।
ভারতের ওডিশায় (পুরোনো নাম উড়িষ্যা) লোকসভার সদস্য ও ড.অচ্ছুত সামন্তের প্রতিষ্ঠিত খ্যাতনামা কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের (কিস)। আদলে ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেস (ডিআইএসএস) গড়ে তুলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এইউএপি) সভাপতি মো. সবুর খান।
গোটা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিশুদের উন্নত ক্লাসরুম শিক্ষক, গাইড,জীবনযাপন লেখাপড়া, খাবারদাবারের মান প্রত্যক্ষ করে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানালেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।
বললেন, এই প্রতিষ্ঠান একদিন বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের বাতিঘর হিসেবে পথ দেখাবে। সমাজের বিত্তবানরা এমন প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে এলে এদেশে ভবিষ্যতে আর কোন পথশিশু খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (ডিআইএসএস) প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর নাকির হোসেন জানান, আমাদের স্লোগান,প্রতিটি শিশুর জীবন হোক আলোকিত তাদেরও আছে অধিকার, জীবন গড়ার।
মূল্যবোধ এবং সম্মানের সাথে শিশুদের গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা মো. সবুর খানের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফসল ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (ডিআইএসএস) । এখানে কেজি থেকে বিনা বেতনে থাকা,খাওয়া ও পড়ার সুযোগ থাকবে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত। বলতে পারেন, ‘কেজি টু পিজি’।
কেবল পড়ালেখাই নয়, -ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (ডিআইএসএস) সকল ছাত্রছাত্রীর জন্য থাকা, খাওয়া, বিনোদন, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুই ফ্রি। কম্পিউটার ল্যাব, কনফারেন্স ল্যাব, ওয়াই-ফাই সিস্টেম—কোনো কিছুরই অভাব নেই এখানে।
একটু সহযোগিতা আর সত্যিকার ভালোবাসা নিয়ে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ালে তারা দেশকে কতটা বদলে দিতে পারেন – সেটাই বাস্তবে রূপ দিতে বদ্ধ পরিকর ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (ডিআইএসএস)।
ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (ডিআইএসএস) প্রতিষ্ঠাতা মো. সবুর খান জানান, আধুনিকভাবে ৩০ জন্য শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আগামী বছর নির্মিত হবে ড্যাফোডিল স্কুল এন্ড কলেজ। এই শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে অধ্যায়নের কালেই উচ্চশিক্ষার জন্য কেবল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিই নয়,তাদের জন্য কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির (কেআইআইটি বা কিট) দুয়ার খুলে দিয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘আইকন অব ওডিশা’,স র্বভারতে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টিকারী ডঃ অচ্ছুত সামন্ত।
তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান ঘুরে আমি সত্যিই এতটা অনুপ্রাণিত হয়েছি দেশে ফেরার পর আমার স্বপ্ন ছিল কবে আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো।
আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা। আমরা ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় যাত্রা শুরু করেছি। জেনে আনন্দিত হবেন,প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিবছর ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেসের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১০ থেকে ১৫ জনকে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজিতে নিখরচায় থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন ডঃ অচ্ছুত সামন্ত।
এটা আমার জন্য কতটা আনন্দের এবং অনুপ্রেরণার তা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের এই প্রকল্প চালুর মাধ্যমে, সুশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।