বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : লিঙ্কশিউর (LinkSure)। এটি একটি চীনা কোম্পানি। এটি SpaceX, Facebook এবং Google-এর মতো বিভিন্ন কোম্পানির সাথে মিলে একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছে। পরিকল্পনা মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে কোম্পানিটি চালু করবে একটি ‘ফ্রি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’। এই পরিকল্পনার মিশন হচ্ছে একটি গ্লোবাল ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা।
এই পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে- এর মাধ্যমে ‘লিঙ্কশিউর’ ইন্টারনেট সার্ভিস জোগানোর জন্য বিভিন্ন কক্ষপথে বা অরবিটে ও বিভিন্ন উচ্চতায় ব্যবহার করবে ২৭২টি স্যাটেলাইট। Facebook, SpaceX এবং Google-এর সাথে মিলে পরিকল্পনা রয়েছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সেবা জোগানোর। বেজিং পদক্ষেপ নিয়ে আসছে ডিজিটাল সিল্ক রোডের অংশ হিসেবে গ্লোবাল কানেক্টিভিটি বাড়িয়ে তোলার।
সাংহাইভিত্তিক কোম্পানি ‘লিঙ্কশিউর নেটওয়ার্ক’ বলেছে- এর মিশন হচ্ছে বিশ্বে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করে ডিজিটাল সেতুবন্ধ গড়ে তোলা। সম্প্রতি এই কোম্পানি উন্মোচন করে এর এই উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ বিনামূল্যে ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ পাবে। এই পরিকল্পনাকে অভিহিত করা হয়েছে LinkSure Swarm Constellation System নামে। এই সিস্টেমের আওতায় কাজ করবে ২৭২টি স্যাটেলাইটের একটি সেট। যাতে এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা যায়। সেজন্য এগুলো চালু থাকবে বিভিন কক্ষপথে, বিভিন্ন উচ্চতায়।
এ ধরনের প্রথম স্যাটেলাইট LinkSure No1 উৎক্ষেপণ করা হবে উত্তর-পশ্চিম চীনে ২০১৯ সালে। এটি উৎক্ষপণ করা হবে জিউকুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে। এটি চীনের লংমার্চ রকেটগুলোর মধ্যকার একটি প্লেলোড অনবোর্ডের অংশ। এরপর আরো কয়েকটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হবে ২০২০ সালে।
এই খবর চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইট Weibo-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চীনা নেটিজেনদের মধ্যে আনন্দ দেখা দেয়। একজন উইবু লেখক লিখেন, ‘ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারার কথা ভাবতে পেরে আমি এতটাই খুশি হয়েছি, যারপর-শেষ নেই। আরেকজন উইবু ইউজার অনেকটা কৌতুকের সুরে বলেছেন, এই ভবিষ্যৎ ইন্টারনেট সার্ভিস চীনা সেন্সরশিপের বাইরে থাকবে কি না, আমরা কি এই ওয়াই-ফাই কানেকশনের মাধ্যমে টুইটার ব্যবহার করতে পারবো?
লঙ্কশিউর কোম্পানির ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, লিঙ্কশিউর এর মধ্যে সেবা দিচ্ছে ২২৩টি দেশের ও অঞ্চলের ৯০ কোটি ব্যবহারকারীকে। এই সেবা জোগান দেয়া হচ্ছে প্রধানত এর অ্যাপ্লিকেশন WIFI Master Key এর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সুনির্দিষ্ট কিছু হটপটে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে ইন্ডিভিজ্যুয়াল লগইন ডিটেইলস ব্যবহার না করেই।
লঙ্কশিউর বলেছে, ‘যখন ঝাঁকে ঝাঁকে চালু স্যাটেলাইট সুযোগ করে দেবে বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ, তখন প্রচলিত ইন্টারনেটে সার্ভিসগুলো চালু রাখতে সমস্যায় পড়বে। জাতিসংঘের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন মতে- এখনো বিশ্বে মোটামুটি ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই ইন্টারনেটে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দেয়া উপাত্ত মতে, এই সমস্যার প্রধান কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। লিঙ্কশিউর বলেছে, এর সেবা এমনসব অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হবে, যেখানে টেরিস্ট্রিয়াল টেকনোলজি পৌঁছতে পারছে না।
লিঙ্কশিউরের প্রধান নির্বাহী ওয়াং জিংইয়াং বলেন- এখনো বিশ্বে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি। পৃথিবীতে রয়েছে এমন অনেক মরুভ‚মি ও সমুদ্র এলাকা, যেখানে এখনো ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছায়নি। কারণ, সেখানে ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়, সে কারণেই আমরা সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়ার কথা ভাবি। ওয়াং জিংইয়াংয়ের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে এয়ারোস্পেস টেকনোলজি এক্সপার্ট হুয়াং ঝিচেংয়ের বক্তব্যে। তিনি সিসিটিভি নামের চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কাছে বলেন, এয়ারোস্পেস প্রোগ্রামে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের বিনিয়োগ। তিনি বলেন, কোম্পানিটি কমপক্ষে ৩০০ কোটি উয়ান বিনিয়োগ করেছে এই পরিকল্পনায়। মানুষকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিলেও কোম্পানিটি আশা করছে, এই কোম্পানিটি নতুন নতুন পার্টনারশিপ ও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চালু রাখা সম্ভব হবে। এদিকে চীনা বিজ্ঞানীরা পরিকল্পনা করছেন আগামী চার বছরের মধ্যে তিনটি কৃত্রিম চাঁদ মহাকাশে পাঠানোর।
অপরদিকে ক্যানবেরার একটি প্রকল্প চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল সিল্ক রোড প্ল্যান করা হয়েছে বেজিংয়ের ডিজিটাল ইকোনমিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার রফতানিতে সহায়তা দেয়ার জন্য। কিন্তু চীনের এই উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা অন্যদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হুয়াওয়ের। এ বছরের শুরুর দিকে ক্যানবেরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ইন্টারনেট ক্যাবল স্থাপনের। এর ফলে চীনের বিখ্যাত মোবাইল যোগাযোগ কোম্পানি হুয়াওয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।