ধর্ম ডেস্ক : আমরা সবাই জানি যে নুহ (আ.)-এর যুগে পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন হয়েছিল। যাতে আল্লাহর মনোনীত কিছু বান্দা ও প্রাণী ছাড়া গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সেই মহাপ্লাবন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সেখানে মহান আল্লাহ একটি পর্বতের নাম উল্লেখ করেছেন, প্লাবন শেষে যেখানে নুহ (আ.)-এর নৌকাটি অবতরণ করেছিল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর বলা হলো, হে জমিন, তুমি তোমার পানি চুষে নাও, আর হে আসমান, বিরত হও। অতঃপর পানি কমে গেল এবং (আল্লাহর) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলো, আর নৌকা জুদি পর্বতের ওপর উঠল এবং ঘোষণা করা হলো, ধ্বংস জালিম কওমের জন্য।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৪৪)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ যে পর্বতের নাম উল্লেখ করলেন, তা হলো জুদি পর্বত। বলা যায়, নুহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনের আজাব থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত মানুষরা প্রথম পৃথিবীর যে মাটিতে অবতরণ করেছিল, এবং যে মাটি বা পর্বত থেকে পৃথিবীর নতুন সভ্যতার সূচনা হয়েছিল, তা হলো জুদি পর্বত। এ কারণেই নুহ (আ.)-কে দ্বিতীয় আদম বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলা হয়। জুদি পর্বত মূলত একটি পর্বতমালার অংশবিশেষের নাম। এর অপর এক অংশের নাম আরারাত পর্বত। কারো কারো মতে, যা ইরাতের মোসেল শহরের অদূরে অবস্থিত। তাওরাত কিতাবে বলা হয়েছে যে জুদি আরারাত পর্বতমালার মধ্যে একটি পর্বত। আরারাত আসলে দ্বীপের নাম। অর্থাৎ দজলা ও ফোরাত নদী দুটির মধ্যবর্তী ‘দিয়ারে বিকর’ থেকে বাগদাদ পর্যন্ত বিস্তৃত যে অঞ্চল তার নামই আরারাত। (কাসাসুল কুরআন : ১/৮৫)
কারো কারো মতে, যে জুদি পাহাড়ে নুহ (আ.)-এর নৌকা এসে থেমেছিল, তা কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইবনে ওমর দ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বাইবেলে এ নৌকার তটস্থ হওয়ার স্থান বলা হয়েছে আরারাত, যা আর্মেনিয়ার একটি পর্বতের নাম। এটি হচ্ছে একটা পর্বতমালা। আরারাত নামীয় এ পর্বতমালার অর্থ হচ্ছে, তা আর্মেনিয়ার উচ্চ শীর্ষ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে কুর্দিস্তান পর্যন্ত চলেছে। এ পর্বত পুঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম জুদি, যা আজও জুদি নামে খ্যাত। প্রাচীন ইতিহাসগুলোতে বলা হয়েছে, নৌকা এ স্থানে এসেই থেমেছিল। বস্তুত ঈসা (আ.)-এর জন্মের আড়াই শ বছর আগে বেরাসাস (Berasus) নামে ব্যাবিলনের জনৈক ধর্মীয় নেতা প্রাচীন পরম্পরাগত বর্ণনার ভিত্তিতে আপন দেশের যে ইতিহাস রচনা করেন, তার মধ্যে তিনি নুহ (আ.)-এর নৌকার তটস্থ হওয়ার স্থান জুদি পাহাড়ই বলেছেন। অ্যারিস্টটলের শিষ্য আবিদেসও (Abydenus) তাঁর ইতিহাসে এর সত্যায়ন করেছেন। উপরন্তু তিনি সে যুগের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ইরাকের বহু লোকের কাছে সে নৌকার খণ্ডিত অংশগুলো সংরক্ষিত আছে, যেগুলো ধুয়ে ধুয়ে তারা রোগীদের পানি পান করায়।’ (সীরাতে সরওয়ারে আলম : ২/২২)
বিভিন্ন প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে ইরাকের বিভিন্ন স্থানে উক্ত নৌকার ভগ্ন টুকরাগুলো অনেকের কাছে সংরক্ষিত আছে, যা বরকত মনে করা হয় এবং বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। (নবীদের কাহিনি)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।