রমজানের আগেই নাগালের বাইরে ফলের দাম

Fruits

জুমবাংলা ডেস্ক : ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিলাসি পণ্য দেখিয়ে অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে ভোক্তার ওপর ফলের বাড়তি দামের খড়গ চেপে বসেছে। এর মধ্যে আইএমএফর চাপে নতুন করে ফলে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এতে ১১-১৭ জানুয়ারি সাত দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০-১০০ টাকা। ফলে পরিবারের জন্য যারা ফল কিনতেন, তারা তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। খুব প্রয়োজন হলে পারিবারিক খরচ সমন্বয় করে এক-দুটি করে ফল ওজন দিয়ে কিনছেন। এমন পরিস্থিতিতে রোজা শুরু হতে প্রায় এক মাস ১০ দিন বাকি থাকলেও এখনই ফলের বাজারে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। রোজার আগে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রোজাদাররা।

Fruits

তারা বলছেন, ফল এখন কোনো বিলাসী পণ্য নয়। এটি জীবন রক্ষায়ও অনেক ক্ষেত্রে উপাধেয় পথ্য। এছাড়া রমজানে ফল ছাড়া রোজাদারের ইফতার অনেকটাই অসম্পূর্ণ।

এদিকে ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাজা ও শুকনা ফলে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। এর সঙ্গে আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপরও শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে পহেলা মার্চ থেকে শুরু হবে রমজান মাস। এই মাসে সব শ্রেণি, বিশেষ করে রোজাদাররা তাদের সামর্থযমতো ইফতারে ফলের আয়োজন করেন।

দেশীয় ফলের মৌসুম শুরু হবে মে মাস থেকে। এতে রোজার পুরো মাস আমদানি করা ফলের ওপর চাপ বাড়বে। আর এমন সময় ফলের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় ইতোমধ্যে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। রোজায় এই দাম ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়াবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

রোববার কথা হয় রাজধানীর সর্ববৃহত্ পাইকারি বাজার বাদামতলীর জননী ফল আড়তের মহাজন জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার ফলের ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে। আমদানিকারকরা আমদানি পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে আড়তে দাম বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে ফল এনে কিছু কমিশনে বিক্রি করে দিই। সেক্ষেত্রে ৯ কেজির আঙুরের বাক্স বিক্রি হচ্ছে ৫০০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৪৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০ কেজি মাপের প্রতি বাক্স আপেল বিক্রি করছি ৫৪০০-৫৫০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৮-৯ কেজির প্রতি বাক্স কমলা বিক্রি হচ্ছে ৫৩০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৪৫০০ টাকা ছিল। চায়না কমলা প্রতি বাক্স বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। যা আগে ৩১০০-৩২০০ টাকা ছিল। ১৪-১৫ কেজি ওজনের প্রতি বাক্স মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা, যা আগে ৩১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বিদেশি ফলকে বিলাসপণ্য দেখিয়ে আমদানিতে এলসি মার্জিন ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে গত বছর রোজা থেকে ফলের দাম বাড়তি। এখন নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর ফলে ফলের দাম ফের বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন পরই রোজা শুরু হবে। এই মুহূর্তে কোনো পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো ঠিক হয়নি। তাই শুল্ক না বাড়িয়ে ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে হবে।

রোববার রাজধানীর নয়াবাজার, মালিবাগ বাজার ও কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি কমলা আগে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। এখন ২৮০-৩০০ টাকা। চায়না কমলার কেজি এখন ৩২০ টাকা। যার মূল্য ৩০০ টাকা ছিল। মাল্টা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকা। সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ২৫০-২৬০ টাকা। সবুজ আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা কেজি। সাত দিন আগে ৪০০-৪১০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। আগে ৫০০ টাকা ছিল।

রাজধানীর নয়াবাজারে ফল কিনতে এসেছেন মো. নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক আগ থেকেই পরিবারের জন্য ফল কেনা বাদ দিয়েছি। হাসপাতালে একজন রোগী দেখতে যাব, তাই ফল কিনতে এসেছি। কিন্তু ফলের যে দাম তা শুনে কী রেখে কী কিনব বুঝতে পারছি না। কয়েকদিন আগেও ফল কিনেছি। তবে আজ এসে দেখি সব ফলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই দু-একটি করে ওজন দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন পর শুরু হচ্ছে রমজান মাস। তখন এমন দাম থাকলে ইফতারের আইটেম থেকে ফল বাদ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, রমজান মাসে সবাই যাতে ফল কিনে খেতে পারে সেজন্য এক মাস আগেই শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু শুল্ক কমানের কোনো সদ্ধিান্ত না নিয়ে নতুন করে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই সদ্ধিানে্তর কারণে নতুন করে ফলের দাম বেড়ে গেছে। সেজন্য ক্রেতার ব্যয় বাড়ছে। এতে অনেক ক্রেতা ফল কেনা থেকে বিরত থাকছে। অনেক আমদানিকারক লোকসানের শঙ্কা দেখছেন। তাই নতুন করে ফল আমদানিতে সাহস পাচ্ছেন না। এর প্রভাব অবশ্যই রমজানে পড়বে।

এদিকে এনবিআরের যে ইউং ফলের শুল্ক নিয়ে কাজ করে তারা জেনেভায় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ’র শর্ত মানতে গিয়ে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ফলও রয়েছে। দেশে বেশি আমদানি হয়। এ কারণে ফল বিলাসি পণ্য হিসাবে তালিকা করা হয়েছে। সে হিসাবে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। কারণ এটা মানুষের ভোগ্যপণ্যের তালিকায় পড়ে না। তিনি জানান, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে এনবিআর ইতোমধ্যে পেঁয়াজ, চিনি, আলুসহ একাধিক পণ্যের ওপর আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। ফল যেহেতু নিত্যপণ্য নয়, এজন্য আইএমএফ’র কারণে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।