জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করে আলোচনায় এসেছেন বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান শিক্ষক ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স।
নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা এবং ব্যবসার জন্য তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ফান্ড গঠন করা উদ্দেশ্যেই এমন অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন এই কৃষি উদ্যোক্তা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারএলাকায় নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আবু বকর সিদ্দিক লিখেন, “স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে ১৬ কেজি কচুর লতি বিক্রি করলাম। কচুর লতি বর্তমানে বাজারের সবচেয়ে দামি সবজিগুলোর একটি। তবে লতির বিভিন্ন জাত আছে। আরেকটু মোটা জাতেগুলোর দাম একটু কম।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন অভিনব কাণ্ড দেখে তাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। আর এভাবে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যান তিনি।
পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও কৃষিকে ভালোবাসে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে হাতিলেইট গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন ড. প্রিন্স। ৭ একর জমিতে গড়ে তুলতেছেন “কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ” নামে একটি কৃষি খামার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে ৬ মাস ছুটি নিয়ে খামারে কৃষিকাজ করেন প্রিন্স।
তার ফল বাগানে আছে তিন প্রজাতির ড্রাগন ফলের ছয় হাজার গাছ। আরও রয়েছে- মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতের লিচু, মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মল্টা ও কলাসহ দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফল গাছ।
প্রিন্সের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরে। তার বাবা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতেন।
২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৮ সালে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
ড. প্রিন্স বলেন, “আমাদের কৃষিজমির সংখ্যা কমছে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হলে কৃষির সঙ্গে পারিবারিক একটা সম্পর্ক থাকতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই বাগান করা শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি নিয়ে এক ধরনের নেশা কাজ করতো আমার মাঝে। মাকে দেখেছি কৃষি নিয়ে কাজ করতে। এছাড়া, প্রয়াত শ্বশুরের কাছ থেকেও কৃষির আদ্যোপান্ত হাতেকলমে শিখেছি।”
তিনি আরও বলেন, “পরিকল্পিত একটি ফলের বাগান গড়তে সময় লাগে কমপক্ষে সাত থেকে আট বছর। কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ বাগানটির বয়স হয়েছে সাত বছরেরও বেশি। আমি নিজেকে এখনো সফল মনে করি না। কৃষিতে সফলতা আসে আস্তে-ধীরে। এ জন্য উদ্যোক্তাকে অভিজ্ঞ হতে হবে।”
“নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল আবাদ করাই আমার লক্ষ্য। বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার ও জৈব সার ব্যবহার করি। ফলগাছে পোকামাকড় নিধনে বেশি ব্যবহার করি বিভিন্ন রকমের ফাঁদ,” তিনি বলেন।
নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কেউ যদি ভালো কৃষি উদ্যোক্তা হতে চায় এবং টিকে থাকতে চায় তাকে অবশ্যই সময় দিতে হবে, নিজের পণ্য নিজেকেই বিক্রি করতে হবে। অন্যের ওপর ভরসা করে সফল হওয়া যাবে না।”
ড. প্রিন্স মনে করেন নিজের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই। এতে উদ্যোক্তারা আরও অনুপ্রাণিত হবে। তরুণরাও উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে।
তিনি বলেন, “তরুণ নতুন উদ্যোক্তাদের অনেকেই অর্থ সংকটে ভোগেন। সরকারি ঋণ পাওয়া যায় না যা অনেক বড় একটি সমস্যা। যে কারণে মাঝপথে অনেক উদ্যোক্তা ঝড়ে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে ব্যক্তিগতভাবে একটি ফান্ড গঠন করব। ফান্ড থেকে নতুন উদ্যোক্তারা বিনা জামানতে ঋণ পাবেন।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।