জুমবাংলা ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের রেজা শাহ্ চিশতি (শাহ্ ভালাই) এর মাজার ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গত ৫ ও ৬ আগস্ট এই মাজারের সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সবকিছু লুটপাট করে আত্মসাৎ করে দুর্বৃত্তরা।
জানা গেছে, উপজেলার কুষাঘাটা গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে রয়েছে ঈদগা, গ্রামের কবরস্থান ও একপাশে নদীর কোলঘেঁষে রেজা শাহ্ চিশতি (শাহ্ ভালাই) এর মাজার। ৩৩ শতক জমির ওপর শাহ্ ভালাই দরগা হিসেবে পরিচিত এই স্থানকে ঘিরে ভক্তরা তৈরি করেন মাজার। মাজারে ভক্ত সমর্থকদের দানের টাকায় গড়ে তোলা হয় একটি পাকা টাইলস দেওয়া বিশ্রামাগার, রান্নাঘর ও বাথরুম। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার মানুষ মানত করতে আসতেন তাদের মনবাঞ্ছা পূরণে।
এছাড়াও বাউল ধারার অনুসারীরা এখানে অবস্থান করে সাধন সংগীতের চর্চা করতেন। গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে ঐ দিন সন্ধ্যায় ও পরদিন সন্ধ্যায় ২০-২৫ জন স্থানীয় দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে সব কিছু ভাঙচুর করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। মাজারের পাশের কবরস্থানে ঐ গ্রামের খাজা উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির কবরও ভাঙচুর করা হয়।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রেজা শাহ্ চিশতী ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক। আনুমানিক সাড়ে ৩০০ বছর আগে ইসলম ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ঐ এলাকায় এসেছিলেন। তখন এই অঞ্চল ছিলো গহীন জঙ্গল। আস্তে আস্তে বিকশিত শুরু হয়, গড়ে উঠে মানব সমাজ। মাজারে হামলা চালিয়ে ধ্বংসলীলা চালানোর পর থেকে খাদেমদের কেউ ভয়ে-আতঙ্কে মাজারের কাছে আসেন না। স্থানীয় ২০ থেকে ২৫ জন দুর্বৃত্ত এই কাজের সঙ্গে জড়িত। এরাই মূলত বিএনপি ও জামায়াতের নাম ভাঙিয়ে মাজার ভাঙাসহ লুটপাট চালায়, যা এলাকার মানুষ সবাই জানে এবং দেখেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, এই মাজারে কোনো প্রকার মদ গাঁজা তো দূরের কথা কোনো প্রকার সিগারেট, বিড়ি খাওয়াও নিষেধ ছিল। কোনো রকম মাদকদ্রব্য সেবন করা হতো না।
মাজারটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে দৃষ্টি নন্দন করে দিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের একজন ভক্ত। দুর্বৃত্তরা মাজারের প্রধান ফটকের স্টিলের গেট লুট করে নিয়ে গেছে। অপর একটি ঘরের দরজা গ্রিল লুট করে তা বিক্রি করে মাজার চত্বরে পিকনিক করে খেয়েছে বলে জানান স্থানীয় অনেকেই। এখানকার ১৩০টির বেশি টিন এমনকি মাজারে ব্যবহৃত ইট পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেছে তারা। ভয়ে গ্রামবাসী এখন আর কারো নাম প্রকাশ করছেন না।
এলাকাবাসী আরো বলেন, প্রশাসনের লোকজন সরেজমিন তদন্তে আসলে তাদের কাছে এলাকার স্থানীয় দুর্বৃত্তদের নাম প্রকাশ করা হবে এবং মাজার থেকে লুট করা মালামাল কার কার বাড়িতে আছে তাও বলে দেওয়া হবে।
মাজারে মানত করার পর মনের আশা পূরণ হলে গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার একটি পরিবার আসে মানতের খাসি মাজারে দিতে। এলাকার দুর্বৃত্তরা মানত করতে আসা মানুষদের কাছ থেকে জোর করে খাসি ছিনিয়ে নেয়।
উপজেলার হাউলী ইউপির এক দম্পতির দুই কন্যা সন্তানের পর ৮ বছর আর কোনো সন্তান হয় না। মাজারে মানত করে আসার পর পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম রহমত আলী। এর জন্মগ্রহণের পর মানত করা একটি খাসি সেখানে নিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
তারা বলেন, এখানে কোনো সিন্নি করা হবে না। আপনারা এখনি চলে যান, না হলে ঝামেলায় পড়বেন। তখন দম্পতি দেখেন মাজারটি একেবারেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নবাগত পুত্র সন্তান রহমত আলীর হাতে খাসির দড়ি দিলে সে ছেড়ে দেয় এবং তা একজন কুড়িয়ে নেন।
মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে এই দম্পতি বলেন, আল্লাহর অলি আউলিয়াদের মাজার ভাঙতে নেই, তাতে অভিশাপ বর্ষণ হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে মানতের সিন্নি রান্না করে অত্র এলাকার গরিব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলি করে খাওয়ানো হতো।
মাজার কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মসলেম উদ্দীন বলেন, এখানে কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ হতো না। দানের অর্থে মাজারটি জাঁকজমক ভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তেনের পর তার সব কিছু গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মাজার দামুড়হুদা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকার ধর্মীয় ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। মাজার পূনর্নির্মাণ ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।