আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তারিখটা ছিল ২০ অক্টোবর। ২০২৩ সালের এ দিনই নতুন জীবন শুরু করার কথা ছিল আবদুল্লাহ ও রেহামের। গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরের এক কোনায় ছোট্ট ঘরটা নতুন করে রাঙানো হয়েছিল। যার প্রতিটি কোনায় ছিল স্বপ্ন। দিন গুনছিলেন, কবে হবে তাদের বিয়ে। সাদা গাউনে রেহাম, কালো স্যুটে আবদুল্লাহ-প্রতিজ্ঞা করবে আজীবনের পথচলার। কিন্তু যুদ্ধ তো প্রেম বোঝে না। শুভ দিন আসার আগেই ইসরাইলি বোমায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় সবকিছু। ট্যাংকের গর্জন আর বোমা বসত-ভিটার মতোই লন্ডভন্ড হয়ে যায় তাদের সাজানো সংসারের স্বপ্ন। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ। অন্যদিকে উত্তর গাজার বন্দিদশায় আটকে পড়েন রেহাম হাব্বোশ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুটি হৃদয়। তারা জানেনও না আবার দেখা হবে কি না। বছর পেরিয়ে গেছে। আজও আবদুল্লাহর মনে গেঁথে আছে রেহামের ভালোবাসা। মিডল ইস্ট আই।
সেদিনের বর্বর ওই বোমা হামলায় মন পুড়ে গেছে দুজনারই! বিয়ে ভেঙে গেছে। বিচ্ছেদ হয়েছে । ‘এক ছাদের জীবন’ ছিটকে দুজন আজ দুই প্রান্তে। তবু ‘প্রেমের শেকল’ ছেড়েনি। এখনো অক্ষত সেই পুরোনো মায়া। দক্ষিণ গাজার এক জীর্ণ আশ্রয়শিবিরে বসে সেই সানায়-ই বাজলো তার দীর্ঘশ্বাসে! কাঁপা কণ্ঠে বললেন-‘আমি এবং রেহাম; আমরা ভালোবাসা আর স্বপ্নে বিশ্বাসী। আমরা এখনো সেগুলো আঁকড়ে ধরে আছি।’
৩১ বছর বয়সি ডা. আবদুল্লাহ হাসান আবদোর শিকড় গাঁথা গাজার দক্ষিণাংশের তেল আল-হাওয়া অঞ্চলে। সেখানেই তার শৈশব, বড় হয়ে ওঠা। ডাক্তারি পড়তে মিসরে গিয়েছিলেন তিনি। ডিগ্রি অর্জন করে ফিরে আসেন নিজের শহর গাজায়। সাধারণ মানুষদের সুলভে ভালো চিকিৎসা দিতে শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি ক্লিনিক খোলেন আবদুল্লাহ। ছয় বছর ধরে সেই ক্লিনিকে কাজ করেছেন। প্রতিদিন নতুন হাসি ফোটাতে চেষ্টা করেছেন। একইসঙ্গে গড়েছেন ভবিষ্যতের সঞ্চয়। রেহামের সঙ্গে জীবনের পথচলার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। দক্ষিণ গাজার এক আশ্রয় শিবিরে বসে আবদুল্লাহ বলেন, তেল আল-হাওয়াপাড়ায় নিজেদের হাতে গড়া বাড়িটা ধ্বংস করে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। সে সঙ্গে ক্লিনিকটাও।
আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘সবকিছু হারিয়ে গেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যখন আমাদের বাড়ি খালি করার হুমকি দেয় তখন আমি ও আমার পরিবার দক্ষিণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হই। কিন্তু আমার আত্মার সঙ্গী রেহাম এবং তার পরিবার উত্তরে আটকা পড়ে।’ তিনি জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে রেহামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় আলাদা হয়ে পড়েন তারা। ইসরাইলি হামলায় ভাইয়ের স্ত্রীর পরিবারসহ তার পরিবারের ১৫ জন সদস্যকে হারিয়েছিলেন আবদুল্লাহ। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও হারিয়েছেন তিনি। সব কিছুর পরও তিনি আশায় বুক বেঁধে আছেন এখনো। বিশ্বাসের সঙ্গে বাগদত্তার ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তিনি মনে করেন, একদিন অবশ্যই রেহামের সঙ্গে আবার মিলিত হবেন। শুধু আবদুল্লাহ-রেহামই নন; এমন অসংখ্য গল্প চাপা পড়ে আছে গাজার ধ্বংসাবশেষের আস্তাকুঁড়ে। প্রায় দুবছর ধরে চলা ইসরাইলের হামলায় গাজায় এমন আরও অনেক বাগদত্তা তাদের স্বপ্ন হারিয়েছেন। চুরমার হয়ে গেছে তাদের বেঁচে থাকার সাধ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।