আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জার্মানিতে পাওয়া যাচ্ছে নাগরিকত্ব খুব সহজেই। তবে কিছু শর্ত দিয়ে দেশটি ভিনদেশিদের নাগরিকত্ব দেবে তা পরিষ্কার করে দিয়েছে সম্প্রতি। নতুন নাগরিকত্ব আইন দেশটির সংসদে পাস হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টগুলোর একটি জার্মান পাসপোর্ট। দেশটিতে নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস হয়েছে। এর ফলে জার্মানিতে বসবাস করা ব্যক্তিদের জন্য জার্মান পাসপোর্ট পাওয়ার পথ আরো সহজ হতে যাচ্ছে। নতুন আইনে কী কী পরিবর্তন আসছে, তাতে কী সুবিধা পাওয়া যাবে-জানুন বিস্তারিত।
সম্প্রতি জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগের আইনপ্রণেতাদের ভোটে আইনটি পাস হয়েছে। দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে জার্মানি৷ সরকার বলছে, এই আইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিভাবান ব্যক্তিদের কাছে জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
মাত্র পাঁচ বছরে মিলবে পাসপোর্ট। আইনটিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল সময়সীমা। এর আগে জার্মানিতে আট বছর অবস্থানের পরই কেবল বিদেশিরা জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারতেন। তবে সমাজে একীভূত হওয়ার প্রমাণ সাপেক্ষে ছয় বছর থাকার পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারতেন বিদেশিরা।
এখন তা কমিয়ে আনা হয়েছে পাঁচ বছরে। এমনকি আবেদনকারীরা যদি খুব দক্ষতার সঙ্গে জার্মান সমাজে একীভূত হতে পারার প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলে তিন বছরেই নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।
জার্মানির একত্রীকরণ এবং বর্ণবাদবিরোধী কমিশনার রিম আলাবালি-রাডোফান বলেন, ‘জার্মানি সবসময় অভিবাসনের দেশ এবং আমরা এখন নিশ্চিত করছি, যাতে জার্মানি অভিবাসনের জন্য একটি টেকসই দেশে পরিণত হয়, যে দেশে সবার অংশগ্রহণ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আইন রয়েছে।
জার্মানিতে বসবাসকারীদের প্রায় ১৪ শতাংশ অর্থাৎ ১২ লাখ মানুষে রয়েছে বিদেশি পাসপোর্ট। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন। জার্মানিতে নাগরিকত্ব অর্জনের হার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর গড় হিসাবের চেয়ে অনেকটাই কম।
দ্বৈত নাগরিকত্ব : নতুন এই আইনটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্বৈত নাগরিকত্ব। নতুন জার্মান আইনে, বিদেশিরা নিজের দেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারবেন। এর আগে, শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র এবং হাতে গোণা অন্য কয়েকটি দেশের নাগরিকেরাই জার্মানিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখতে পারতেন।
আলাবালি রাডোফান বলেন, ‘আমরা অবশেষে লাখো অভিবাসীর জীবনের বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। আমরা প্রত্যেকের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের সম্ভাবনা তৈরি করছি। একজন মানুষের দুটি পাসপোর্ট থাকা ২০২৪ সালে বিশ্বের জন্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা৷ অনেক দেশেই এটি আরো আগে থেকেই হয়ে আসছে।
বলে রাখা ভালো, দ্বৈত নাগরিকত্ব দুই দেশের আইনের ওপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হবে। জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন, একজন অভিবাসী তার নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা তার দেশের আইনের ওপরও নির্ভর করবে।
নবজাতকদের জন্য কমছে সময়সীমা : নাগরিকত্ব আইনের এই সংস্কারটি নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী হবে। বাবা-মায়ের মধ্যে যেকোনো একজন টানা পাঁচ বছর জার্মানিতে বাস করলে জার্মানিতে জন্ম নেয়া তাদের শিশুও দেশটির নাগরিকত্ব পাবে। এতদিন এই সময়সীমা ছিল আট বছর।
তবে এটাও জেনে রাখা উচিত যে, নাগরিকত্ব কেবল তাদেরই দেয়া হবে, যারা নিজের পাশাপাশি তার ওপর নির্ভরশীলদেরও দায়িত্ব নিতে সক্ষম। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কল্যাণভাতা নেয়া ব্যক্তিরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।
যাদের আবেদনের অযোগ্য হবেন : আবেদনকারীদের কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকলে চলবে না। ছোটখাটো অপরাধ আর জরিমানা অবশ্য বিবেচনায় নেয়া হবে না। কিন্তু, ইহুদিবিদ্বেষ বা বর্ণবাদের অভিযোগে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীরা এই সুযোগ বঞ্চিত হবেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানিতে বেশ কয়েকটি ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে। নাৎসি অতীতের কারণে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ বেশ সংবেদনশীল একটি ইস্যু৷ ইহুদিবিদ্বেষ এখানে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হয় না।
জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে আইনটি পাস করেছে। অবশ্য পুরোপুরি আইনে পরিণত হওয়ার আগে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাটেও এটি পাস হতে হবে৷ তারপর চূড়ান্ত সইয়ের জন্য পাঠানো হবে প্রেসিডেন্টের কাছে৷ আশা করা হচ্ছে গ্রীষ্মের আগেই শেষ হবে সব আনুষ্ঠানিকতা৷ তারপর এটি কার্যকর হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।