লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমরা জানি, সালোক সংশ্লেষণের ফলে সবুজ গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমে, বেড়ে যায় অক্সিজেনের পরিমাণ। এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে- ঘরে যদি গাছ থাকে, তবে কি আমরা অক্সিজেন বেশি পাবো?
এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ঘরে গাছ রাখলে বেশি অক্সিজেন পাওয়া যায়। এ জন্য অনেকে ঘরে ফুলগাছ থেকে শুরু করে নানা ধরনের গাছ রাখেন। কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে, শুধু সবুজ গাছই অক্সিজেন তৈরি করে এবং এ জন্য তীব্র আলো দরকার। রাতে গাছ অক্সিজেন তৈরি করতে পারে না। এ ছাড়া রঙিন ফুলও অক্সিজেন তৈরি করে না। সুতরাং রাতে ঘরের ফুলগাছ বাড়তি কোনো সুবিধা দেয় না।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ডাচ জীববিজ্ঞানী ইয়ান ইনঙ্গেনহৌজ সবুজ গাছ ও বাতাসের মধ্যে এই দেয়া-নেয়ার ব্যাপারটি আবিষ্কার করেন। ঘরে গাছ রাখলে কোনো উপকার পাওয়া যাবে কি না সে ব্যাপারে তিনি সন্দিহান ছিলেন।
আসল ব্যাপার হলো, টবে লাগানো ফুলগাছে ঘরের বাতাস খুব একটা পরিশুদ্ধ হয় না। তবে ক্ষতিও নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ লোকই বুঝতে পারেন না যে দূষণকারী রাসায়নিক পদার্থ ঘরের ভেতরে কীভাবে ঘুরছে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বাড়ি, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার এবং সতেজ করার জন্য আমরা যে পণ্য ব্যবহার করি তার অনেকগুলো বাতাসে অদৃশ্য টক্সিন বা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যোগ করছে।
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক পালমোনারি বিশেষজ্ঞ অ্যান হিকস বলেন, ‘গাছের বা ফুলের তাজা গন্ধ বলে কোনো গন্ধ নেই। আপনি যদি কোনো কিছুর গন্ধ পান তবে বাতাসে একটি রাসায়নিক পদার্থ অবশ্যই রয়েছে যা আপনার নাক দিয়ে শরীরে ঢুকছে। আর এর সবই বায়ু দূষণ; যদি সেটি সুঘ্রাণও হয়।’
ফলে শোবার ঘরে বা বদ্ধ পরিবেশে গাছ বা ফুলগাছ না লাগানোই ভালো বলে মতামত দেন এই বিজ্ঞানী।
তবে ১৯৮৯ সালে নাসার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গৃহমধ্যস্থ উদ্ভিদ বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড এবং অন্যান্য উদ্বায়ী জৈব যৌগ অপসারণ করতে পারে। কিন্তু গবেষণা বাস্তব বিশ্বের অবস্থার সঙ্গে মিল ছিল না। এটি তৈরির জন্য বাড়ির ভেতরে একটি বড় বনের প্রয়োজন হতো। যা অবাস্তব।
রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির প্রধান উদ্যানতত্ত্ব বিজ্ঞানী এবং রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিজানা ব্লানুসা গণমধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্যান্য অনেক গ্যাস অপসারণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে হলে অবশ্যই বাড়ির ভেতর প্রচুর গাছপালা এবং ভালো আলোর প্রয়োজন হবে। যাইহোক, এ ধরনের সবুজ দেয়াল ইনস্টল এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল।
বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, কোনো ছোট ঘরে যদি অনেক গাছের টব রাখা হয় তাহলে হয়তো অক্সিজেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাঠের বড় বড় বটগাছ দিনে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বাতাসে প্রচুর অক্সিজেন দেয়। সে তুলনায় গাছের শ্বাস-প্রশ্বাসে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু রাতে শুধু এই ক্ষতিকর গ্যাসটিই অল্প অল্প করে বাতাসে মেশে এবং এটা তুলনামূলক ভারী বলে নিচে জমা হতে থাকে। গাছ যদি খুব বড় হয় তাহলে হয়তো ভোরের দিকে সঞ্চিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কিছুটা বেশিই হয়ে যায়। এ জন্যই বড় গাছের নিচে রাতে ঘুমানো উচিত নয়। এতে শেষ রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ঘটনা থেকে গ্রামের অনেকে বলেন, বড় বটগাছে ভূত থাকে, ওরা গলা চেপে ধরে। আসলে সেটা ওই অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির জন্য হয়ে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।