আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘোড়া, আমাদের প্রাণিজগতের অতিপরিচিত একটি চতুষ্পদ প্রাণী। নানা কারণে ঘোড়া মানুষের খুবই প্রিয়। বিশেষ করে পিঠে চড়া যায়। প্রাচীনকাল থেকেই সওয়ারি হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে এই প্রাণী। দ্রুতগামী বলে একে তুরগ বা তুরঙ্গমও বলা হয়।
অতিপরিচিত এই প্রাণীটি বেশিরভাগ সময়ই ঘোড়া দাঁড়িয়ে থাকে। এমনকি ঘুমায়ও দাঁড়িয়ে। ব্যাপারটা নিয়ে প্রায় সবার মনেই কৌতূহল আছে। তাই বলে কি ঘোড়া কখনোই শুয়ে ঘুমায় না? হ্যাঁ, ঘোড়াও শুয়ে ঘুমায়, দিনের কিছুটা সময় ঘোড়াকে শুয়ে থেকেই ঘুমাতে হয়।
তবে বেশির ভাগ সময়ই এরা দাঁড়িয়েই ঘুমায়। শিকারি দেখলেই যেন চট করে দৌড় দিতে পারে তাই দিনের বেশির ভাগ সময়ই ঘোড়া দাঁড়িয়ে ঘুমায়। আর শুয়ে ঘুমালে সেটা সম্ভব নয়। কেননা ঘোড়া বেশ বড়সড় একটা প্রাণী।
এত বড় শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়াতে অনেক শক্তি আর সময় লাগে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলে সেটার দরকার পড়ে না। বলা যায় শিকারির কবল থেকে দ্রুত রক্ষা পেতেই ঘোড়া এইভাবে অভিযোজিত হয়েছে।
কিন্তু কথা হল, আমাদের কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই পা অবশ হয়ে আসে। মনে হয় যেন কোথাও বসতে পারলে বাঁচি। কিন্তু ঘোড়া কি করে এত সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?
এর পেছনে আছে এদের শরীরের এক বিশেষ সিস্টেম এর ভূমিকা। এর নাম স্টে অ্যাপারেটাস। টেন্ডন আর লিগামেন্ট নামে কিছু নরম টিস্যু নিয়ে এই সিস্টেম গঠিত। দেয়ালে পোস্টার লাগাতে যেমন আঠা লাগে, তেমনি হাড়ের সাথে মাংস জোড়া লাগে টেন্ডন দিয়ে।
আর লিগামেন্ট দরজার কব্জার মতন দুইটা হাড়কে একসাথে জোড়া লাগায়। ঘোড়ার সামনের পা আর পেছনের পা, উভয় পায়েই এই স্টে অ্যাপারেটাস কাজ করে। ঘোড়া যখন পায়ের পেশী প্রসারিত করে তখন এই স্টে অ্যাপারেটাস- হাঁটু, গোড়ালিতে থাকা হাড়ের জয়েন্ট আর কাধকে স্থির রাখতে টেনশন ব্যান্ড হিসেবে কাজ করে। ফলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও ঘোড়ার ক্লান্তি লাগে না। বরং দাঁড়িয়ে থাকলে এদের শরীরের পেশীগুলো রিল্যাক্স (শান্ত) হয়।
তবে এভাবে কিন্তু ঘোড়ার ঘুম চক্র সম্পন্ন হয় না। কেননা দাঁড়িয়ে থেকে রেম ঘুম ((রেম-র্যাপিড আই মুভমেন্ট)) সম্ভব না। ঘুমের গভীর স্তরের নাম রেম ঘুম। এসময় চোখ নড়তে থাকে, মানুষ স্বপ্নও দেখে এই স্তরেই। তখন শরীরের সমস্ত পেশী অসাড় হয়ে পড়ে। এই স্তরে মস্তিস্ক স্মৃতি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই ঘোড়াকে রেম ঘুমের জন্যে হলেও দিনের কিছু সময় শুয়ে ঘুমাতে হয়। অন্তত দিনে পঁচিশ মিনিট হলেও ঘোড়ার রেম ঘুম দরকার হয়।
বোতলের ঢাকনার রং লাল-নীল-কালো হওয়ার অর্থ কী? অনেকেই জানেন না
তা না হলে ঘোড়ার ঘুম চক্র ঠিকঠাক মতন সম্পন্ন হয় না। ব্যাপারটা ঘোড়ার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভাল না। কিন্তু আশপাশে বিপদের আশঙ্কা টের পেলে ঘোড়া কখনওই শুয়ে ঘুমাবে না। পরিবেশ নিরাপদ আর নিশ্চিন্ত মনে করলেই কেবল ঘোড়া শুয়ে ঘুমায়। তবে সেটা বেশিক্ষণ না। কেননা দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকলে ঘোড়ার শরীরে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। তাই রেম ঘুম সম্পন্ন হলেই ঘোড়া উঠে দাঁড়ায়।
সূত্র: ব্রিটানিকা, সায়েন্টিফিক আমেরিকান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।