জুমবাংলা ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ভোর থেকেই রাজধানী জুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্রেতারা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসলেও দেখা নেই ক্রেতার। এতে কমেছে মাছ, সবজি ও মুরগির দাম। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে একদমই ক্রেতা নেই। ভোররাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না। মাছ-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ক্রেতা সংকটে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা আবুল কাশেম জানান, বৃষ্টির প্রভাবে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবজির দাম। ক্রেতারা না এলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম আরও পড়ে যেতে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
এ ছাড়া শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, শালগম ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও ধনেপাতার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও লাউ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে উঠেছে পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, শীতকাল এলে এই পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার ওপরে। সেই তুলনায় পাতাসহ পেঁয়াজের দাম বেশ কম। বাজারে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, ও লাউ শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে সব ধরনের শাক-সবজির দাম কমেছে। মূলত শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় ও বৃষ্টির কারণে বাজারে ক্রেতা না থাকায় দাম কমতির দিকে। আসলাম নামে কারওয়ানবাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, পানির দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে ক্রেতা নেই। এতেই পড়ে গেছে দাম।
আর ক্রেতারা জানান, শীতকাল আসায় বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। দাম কমছে সবধরনের সবজির। তবে বৃষ্টি কারণে বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বাজারে নিম্নমুখী কাঁচা মরিচের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আর পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজরে মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে ক্রেতা সংকটে চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। এদিকে বাজারে কিছুটা কমেছে মাছের দামও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কৈ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, শিং ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২১০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ইলিশের দামে। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা ও ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা মনে করছেন, বৃষ্টিতে কিছুটা কমলেও এখনো বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সব ধরনের মাছের দাম। যা সাধ্যের বাইরে। দাম কমাতে সরকারি নজরদারি জরুরি।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে পর্যাপ্ত মাছ রয়েছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। এতে মাছের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। হরিপদ নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, এমনিতেই অবরোধের কারণে বেচাবিক্রি নেই। তারওপর আবার বৃষ্টি। এতে বাজরে ক্রেতা না থাকায় কমছে দাম।
দাম কমেছে পেঁয়াজের। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২০০ টাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে।
এদিকে বাজারে দাম কমেছে লাল লেয়ার, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের করিম মোল্লা জানান, পাইকারি বাজারে দাম কমায় খুচরা পর্যায়েও কমেছে মুরগির দাম। বেড়েছে সরবরাহও। আর বৃষ্টিতে ক্রেতা কম থাকার কিছুটা প্রভাবও বাজারে পড়েছে। তবে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভারতীয় ডিম দেশে আসার পর ডজনে কমেছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। প্রতি ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। তবে এলাকার দোকানগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি ডজন হাসের ডিম ২১০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বাড়তে থাকা চালের দাম কিছুটা স্থিতিশীল। গত দুই সপ্তাহে বাড়লেও, চলতি সপ্তাহে নতুন করে বাড়েনি দাম। প্রতি কেজি আটাইশ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা, জিরাশাইল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা ও মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চিনির দাম। প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে না। শুধু শুল্ক কমিয়ে লাভ হবে না। মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে।
এর আগে চলতি মাসের ১ নভেম্বর চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টন চিনিতে শুল্ক কমানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ৩ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।
বাজারে বেড়েছে আটা ও ময়দার দামও। প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ ও ৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৫ ও ৭০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়ায়। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।